সময়ের পরিক্রমায় নামাযের বৈজ্ঞানিক উপকারিতা গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ৫ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। নামায আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করে।

নামায শুধুমাত্র আল্লাহর আদেশ পালনের জন্যই পড়তে হয়। তবুও নামাযের শারীরিক উপকারিতা এবং নামাযের মানসিক উপকারিতা জানা থাকলে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা নিশ্চয় আরো বৃদ্ধি পাবে।


নামাযের বৈজ্ঞানিক উপকারিতা, Namajer Upokarita
নামায

আল্লাহকে সন্তুষ্ট ও খুশী করতে প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে নামায আদায় করতে হয়। নামায মানুষকে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয়। আত্মাকে প্রশান্ত করে। আমাদেরকে নৈতিক অধঃপতনের হাত থেকে রক্ষা করে।

বৈজ্ঞানিক গবেষণাতেও নামাযের শারীরিক ‍উপকারিতা উঠে এসেছে। শুধু নামাযের শারীরিক উপকারিতা নয় নামাযের মানসিক উপকারিতাও অসংখ্য। আজকের লেখায় নামাযের বৈজ্ঞানিক উপকারিতা সম্পর্কে জানাবার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ।

নামাযের দুনিয়াবি উপকারিতা

নামাযের উপকারিতা সমন্ধে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে”। নামাযের মাধ্যমে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টিই অর্জিত হয় না পাশাপাশি আমাদের শারীরিক ও মানসিক উপকারিতা অর্জিত হয়। নীচে কয়েকটি উপাকারিতা তুলে ধরা হলো।


  • মনের প্রশান্তি
  • স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি
  • মনযোগ বৃদ্ধি
  • অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যায়াম
  • ত্বক পরিষ্কার থাকা
  • জীবাণু হতে সুরক্ষা
  • অসামাজিক কাজ থেকে রক্ষা
  • দৃষ্টিশক্তি তীক্ষ্ণ হওয়া


এছাড়াও নামাযের মাধ্যমে অগণিত ভাবে উপকৃত হওয়া যায়। অর্থাৎ, নামায মানুষের শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক পবিত্রতা সাধন করে থাকে।


নামাযের মানসিক উপকারিতা

হাদীসে এসেছে, নামায হচ্ছে মুমিনের মেরাজ। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ তায়ালার সাথে সাক্ষাতের জন্য আল্লাহর সান্নিধ্যে গিয়েছিলেন। একজন মুসলিমও তেমনি নামাযের সময় আল্লাহর সাথে কথা বলে। এতে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বাড়ে। মন প্রশান্ত হয়।


নামাযের কয়েকটি মানসিক উপকারিতা হলো:


  • মানসিক চাপ থেকে মুক্তি
  • আত্মার প্রশান্তি
  • মনযোগ বৃদ্ধি
  • অসামাজিক ও কুরুচিপূর্ণ চিন্তা থেকে বিরত রাখে


আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর তিনি তাঁর পথ দেখান তাদের যারা তাঁর দিকে মুখ ফেরায়, যারা বিশ্বাস করে ও আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়। জেনে রাখো আল্লাহর স্মরণেই চিত্ত প্রশান্ত হয়।” (সুরা রাদ ২৮)


প্রতিদিন ৫ বার নামায আদায় করলে, মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। নামাযের সময় জাগতিক সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে শুধু আল্লাহর প্রতি ধ্যান রাখতে হয়। তাই তখন প্রাত্যহিক ঝুট-ঝামেলার দুঃশ্চিন্তা থেকে রেহাই মিলে।


    Releted: সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ: প্রকৃতি থেকে শেখা


নামাযের মাধ্যমে সকল ধরনের কুচিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তখন বিশুদ্ধ মন নিয়ে যেকোনো কাজ করা যায়। অর্থাৎ, নামাযের মানসিক উপকারিতা বিবেচনা করলে, নামায হলো মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার অন্যতম ঔষধ।


নামাযের শারীরিক উপকারিতা

নিউইয়র্কের বিংহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ে নামাযের শারীরিক উপকারিতা বিষয়ে একটি গবেষণায় পরিচালিত হয়েছে। গবেষণায় উঠে এসেছে, নামাযের মধ্যে শরীরের যেই নড়াচড়া সেটি যদি কেউ সঠিক ভাবে করতে পারে তবে তার পিঠের ব্যাথা কমে যাবে।


সামনের দিকে ঝুঁকে রুকু করা, নীল ডাউন হয়ে বসা, কাবার দিকে মুখ ফিরিয়ে কপাল মাটিতে ঠেকানো সবগুলো অত্যন্ত কার্যকরী ব্যায়াম। প্রতিদিন নিয়মিত সঠিক নিয়মে নামায আদায় করলে এর শারীরিক ও মানসিক উপকারিতা সঠিক ভাবে পাওয়া যায়।


মাঝে মাঝে ব্যায়াম করলে যেমন আদতে শরীরের উপকার হয় না, তেমনি নিয়মিত নামায না পড়লেও এসব উপকার পাবার সম্ভাবনা কমে যাবে। তাছাড়া ইচ্ছাকৃত সালাত আদায় না করলে তা মারাত্মক কবিরা গুনাহ।


বিংহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় নামাযের শারীরিক উপকারিতাগুলোকেই গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়েছে। গবেষকরা প্রমাণ করেছেন ৫ ওয়াক্ত নামায আদায়ের মাধ্যমে মানুষ শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকতে পারেন।


গবেষণায় আরো তুলে ধরা হয়েছে, পিঠের ব্যাথা কমানোর জন্য অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির তুলনায় নামাযের কার্যকারিতা সবচেয়ে বেশি।


অধ্যাপক Mohammad Khasawneh বলেছেন, “প্রার্থনা / নামায শরীরের স্ট্রেস ও উদ্বেগ দূর করে । এধরনের আরও গবেষণা বলছে যে, প্রার্থনা / নামাযের নিয়ম বা আচারগুলো নিউরো-মাসকুলোস্কেলিটাল ডিসফাংশনের কার্যকর ক্লিনিক্যাল চিকিৎসা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে”।


গবেষণাপত্রে আরো বলা হয়েছে, হাঁটু গেড়ে বসে থাকার সময় অর্থাৎ সেজদার পর যেভাবে বসে থাকতে হয় তা শরীরের জয়েন্টগুলোর স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করে। এবং নামাযের সময় এভাবে বেশি সময় ব্যায় করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।


মূলত নিয়মিত নামায শরীরে ঝিম ঝিম প্রভাব, রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দন কমাতে পারে। সেই সাথে শরীরের পেশীগুলো শিথিল করতে সাহায্য করে।


রুকুর উপকারিতা

রুকু নামাযের একটি বাধ্যতামূলক অংশ। প্রতি রাকাতে সিজদায় যাওয়ার আগে ১ বার রুকু করতে হয়। রুকু করার জন্য দাঁড়ানো অবস্থা থেকে দুই হাত দিয়ে দুই হাঁটুতে ধরে পিঠ সোজা রেখে সামনের দিকে ঝুঁকে যেতে হয়।


রুকুর মাধ্যমে অগাধ শারীরিক ব্যায়াম হয়ে থাকে। নীচে এর কয়েকটি উপকারিতা তুলে ধরা হলো:


  • পিঠের নীচের অংশের ব্যায়াম হয়
  • উরু ও ঘাড়ের পেশীগুলো প্রসারিত হয়
  • শরীরের উপরের অংশে রক্ত প্রবাহিত হয়
  • কোমর ও হাঁটুর ব্যাথা উপশম হয়


নামায আদায়ের সময় প্রতি রাকাতে ১ বার রুকু করার সময় পিঠের নীচের অংশের পেশিগুলোতে টান সৃষ্টি হয় ও প্রসারিত হয়। একই সাথে উরু ও ঘাড়ের পেশীগুলোও প্রসারিত হয়। ফলে শরীরের এই অংশগুলোর ব্যায়াম হয় ও নমনীয়তা বৃদ্ধি পায়।


রুকুতে গেলে শরীরের উপরের অংশ হার্টের সামান্তরালে চলে আসে। তাই তখন শরীরের উপরের অংশে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। রুকু করার সময় কোমর ও হাঁটুর মাধ্যমে দেহের ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়।


এজন্য কোমর ও হাঁটু ব্যাথার ক্ষেত্রে দারুন উপকার পাওয়া যায়। শারীরিক ব্যায়ামের বিবেচনায় রুকু হলো সিজদায় যাওয়ার পূর্বপ্রস্তুতি।



সিজদার উপকারিতা

নামাযে সিজদা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সিজদায় থাকা অবস্থায় আল্লাহর সবচেয়ে নিকটে যাওয়া যায়। আল্লাহর কাছে দুআ করার অন্যতম স্থানও হচ্ছে সিজদা।


সিজদার মাধ্যকে কতিপয় দুনিয়াবি উপকারও পাওয়া যায়। যেমন-


  • হাড়ের জোড়ার নমনীয়তা বাড়ে
  • মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ে
  • স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি পায়
  • হাঁটু ও কোমরের ব্যাথা উপশম হয়


নামাযে প্রতি রাকাতে ২ বার সিজদা করতে হয়। সিজদা করার সময় কপাল মাটিতে স্পর্শ করতে হয়। তখন মস্তিষ্ক হৃদপিন্ড থেকে নীচে অবস্থান করে। তাই সিজদার সময় মস্তিষ্কে দ্রুত রক্ত প্রবাহিত হয়। ফলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ে। একই সাথে স্মৃতি শক্তিও বৃদ্ধি পায়।


    Releted: দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টালেই পাল্টে যাবে পৃথিবী


প্রথম সিজদা দেওয়ার সময় দাঁড়ানো অবস্থা থেকে সরাসরি সিজদায় যেতে হয়। ফলে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন দ্রুত হয়। তারপর সিজদা থেকে উঠে সোজা হয়ে বসতে হয়। তারপর পুনরায় ২ সিজাদায় যেতে হয়। ২য় সিজদাটি শরীরের ভারসাম্য এনে দেয়।


দুই সিজদার মধ্যবর্তী সময়ে সোজা হয়ে বসার সময় পায়ের উরু ও হাঁটু এর সংকোচন ও প্রসারণ ঘটে। এই পুরো প্রক্রিয়ায় কোমরের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। তাই সিজদার মাধ্যমে হাঁটু ও কোমরের ব্যাথা উপশম হয়।


নামাযের বৈজ্ঞানিক উপকারিতা নিয়ে পরিশেষ

নামায পড়া প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যিক কর্তব্য। এর মাধ্যমে ইহজাগতিক ও পারলৌকিক অনেক ফযিলত অর্জিত হয়। আল্লাহ তায়ালা যদি নামাযের শারীরিক উপকারিতা নাও রাখতেন তবু মুসলিমদেরকে প্রতিদিন ৫ বার নামায আদায় করতে হতো। কিন্তু তিনি নামাযের মধ্যে ইহকালীন কল্যাণও রেখেছেন, যা বান্দার প্রতি আল্লাহর অপার দয়া ও করুণা।


কিন্তু নামাযের বৈজ্ঞানিক উপকারিতা জানার পর আল্লাহ তায়ালার প্রতি সকলের ভালোবাসা নিশ্চয় আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত নামায পড়ে তারা শারীরিক ভাবে অনেক সমস্যা থেকে মুক্ত থাকেন। তাদের রোগ ব্যাধির হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে।


- আতিকুর রহমান