বাংলাদেশের পাশের রাষ্ট্র ইউনাইটেড নোয়াখালী স্বাধীনতা লাভ করল কিছুদিন আগে!

সিফাতুল্লাহ ওরফে সেফুদা সাহেবের নেতৃত্বে প্রাণপণ যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে।

পেয়েছে নিজেদের জাতীয় সংগীত “মধু হই হই, আরে বিষ খাওয়াইলা.....” গানটি। এদিকে আমার শখ জাগলো এবার করোনার ছুটিতে ঘুরে আসি ইউনাইটেড নোয়াখালী।

ঢাকায় নোয়াখালীর রাষ্ট্রদূত অফিস থেকে ভিসা জোগাড় করলাম।

কিন্তু সারা জীবন বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণ করে অভ্যস্ত হওয়ায় বিমানের টিকিট কাটিনি।

তাই বিমানের রানওয়ের পাশদিয়ে যে খালি জায়গাটা ছিল সেখান দিয়ে লুকিয়ে রানওয়েতে ঢুকে বিমানে উঠে বসলাম।

কিছুক্ষণ পর বিমান ছাড়লো। জীবনে প্রথমবার পাখির মত আকাশে উড়ছি।

দুজন হকার কবিরাজি ঔষধ, রুমাল, ঝালমুড়ি, পপ-কর্ণ বিক্রি করছে!

একজন হকার একটা স্লীপ ধরিয়ে দিল “জীবনের শেষ চিকিৎসা” শিরোনামের (বাকীটুকু বলা যাবে না বুঝে নেন)!

জীবনে বিমানের মধ্যে হকারি করার ঘটনা এখানেই প্রথম দেখছি।

জানতে পারলাম “নোয়াখালী এয়ারলাইন্স” এর বিমানগুলোতে হকারি করার সুযোগ দিয়ে “বিশ্ব হকার সমিতি” এর পক্ষ থেকে তারা এওয়ার্ড পেয়েছে। আমি ১০ টিয়া (নোয়াখালীর মুদ্রা) দিয়ে একটা রুমাল কিনলাম।

কিছুক্ষণ পর বিমানের টিকিট চেকার আসলো! বলল:

- আপনার টিকেটটা দেখান, প্লীজ।

- আমি কোনোদিন ট্রেনেও টিকেট কাটি নাই। তাই আজকে বিমানেও কাটি নাই।

- ও মোর আল্লাহ। এইটাতো বিমান। ট্রেন না।

- ঐ একই কথা। দুই পাশে দুইটা পাঙ্খা লাগাইছে দেইখা কি মহাভারত অশুদ্ধ হইয়া গেছে? তাই বইলা আমার টিকেট কাটতে হইব নাকি?

- কিন্তু স্যার, আমাদের আইন হল টিকিট ছাড়া কেউ নোয়াখালীর “সেফুদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর” এ ল্যান্ড করলে তাকে ক্রস-ফায়ার দেয়া হয়। আমাদের সরকার আইনের ব্যাপারে খুবই কঠোর।

- ও বুজছি। এই নেন ৫০ টিয়া। চা-পান খাইয়েন। আর টিকেট চাইয়েন না।

- কিন্তু আমাদের আইনে সত্যিই ক্রস-ফায়ার দেয়। সেফুদা বিমানবন্দরে একটা ফায়ারিং স্কোয়াডও আছে।

- আস্তাগফিরুল্লাহ! তাইলে ভাই বিমান থামাইয়া দরজা একটু খুলেন নাইমা যাই। আমার জীবনের দাম আছে। আপনাদের বিমানে যাইতাম না।

- Sorry Sir. বিমান-তো আকাশে থামানো যাবে না।

- তাইলে কি আমি অকালে মরতে যাব নাকি? কোন দুঃখে যে নোয়াখালী আসতে গেলাম!

- তাইলে এখন কি করবেন তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নেন। বিমান কিন্তু নোয়াখালীর সীমান্তে আইসা পড়ছে।

- আমারে একটা প্যারাসুট দেন। আমি লাফ দিয়া নাইমা যাই।

তারপর জীবনের প্রথমবারের মত বিমান থেকে লাফ দিলাম। পৃথিবী থেকে প্রায় ২৫০০০ ফুট উপরে আছি। আত্মাটা ধুকধুক করতেছে।

তবে প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো খুবই মনোরম লাগছে। মানুষদেরকে পিঁপড়ার মত ছোট ছোট দেখাচ্ছে!

হঠাৎ বিকট শব্দে আমার গা ঘেঁষে কিছু একটা চলে গেল। তাকিয়ে দেখলাম একটা এন্টি ব্যালেস্টিক মিসাইল! আমার উদ্দেশ্যেই এটা ছাড়ছে।

আরেকটু কাছ দিয়ে গেলে এতক্ষণে নিজেই পিঁপড়া হইয়া মাটিতে পড়ে যাইতাম।

ইতিমধ্যে ১৩০০০ ফুটে এসে পড়েছি। প্যারাসুট উড়িয়ে দিলাম। কিন্তু একি আমার কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে তীব্র শব্দ-বোমায়।

কি ভাবছেন এগুলো সেফুদার শব্দ-বোমা?

না। এগুলো AK-47 স্নাইপার রাইফেলের ফায়ারিংয়ের শব্দ।

তীব্র বাতাসের কারণে টার্গেট ঠিক করতে পারছে না। দুদেশের সীমানার উপরে উড়ছি।

নোয়াখালীতে ল্যান্ড করলে নির্ঘাত মৃত্যু। এদিকে বাংলাদেশের সীমানায় প্রচুর বাঁশঝাড় দেখা যাচ্ছে!

বুঝতে পারছি না বাতাস আমাকে কোথায় নামাবে? আল্লাহই জানেন এখান থেকে বেঁচে ফিরতে পারব কিনা?

তবে বাঁচলে এই জীবনে আর টিকেট ছাড়া বিমান কেন ট্রেনেও উঠবো না।

তবে শেষ মূহুর্তে রবি ঠাকুরের কথা খুব মনে পড়ছে। তিনি আজ বেঁচে থাকলে হয়তো লিখতেন,

“নীল নবঘনে নোয়াখালীর গগণে নিরাপত্তা আর নাহিরে।ওগো, আর তোরা টিকিট ছাড়া যাসনে নোয়াখালীর বিমানে!”


- আতিকুর রহমান

(১৮ জানুয়ারী, ২০২১)