নারীবাদ-আধুনিকতাবাদ-সহশিক্ষা


চোখের সামনে কত কিছু যে দিনকে দিন ঘটে চলছে হরহামেশায় তার কয়টিই বা নজরে পড়ে? অথবা দেখেও না দেখার ভান করে থাকি। বর্তমান প্রজন্মের ভালো খারাপ খবরগুলি টিভির হেডলাইনে নিয়মিত দৌড়াতে থাকে বিরামহীন ভাবে। তবে তাদের অপকর্মগুলোই যেন চোখে পড়ে সবচেয়ে বেশী। হয়ত আমার নজরেই বেশী পড়ে। অন্যদের চোখেও পড়ে কিনা আমি জানি না। এসবের কোনোটা ঘটে মা-বাবার প্রশ্রয়ে কিংবা অগোচরে।

দেশের কত শিক্ষিত ব্যাক্তি আধুনিকতার থিওরি দিয়ে নিজেরা দায়মুক্ত হয়ে বসে আছেন তার ইয়ত্তা নেই। অথচ এসবের ঘানি টানতে হচ্ছে অসহায় পিতা-মাতাকে। আধুনিকতার নামে এসব অসামাজিক ও আমাদের বাঙ্গালি সংস্কৃতির বিপরীত ঘটনার স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে।

এর জন্য অন্যতম দায়ী হল ছেলে-মেয়েদেরকে যথাযথ পারিবারিক শিক্ষা না দেয়া। মূল্যবোধ ও নৈতিক শিক্ষার অবক্ষয়, যথাযথ ধর্মীয় শিক্ষা না দেয়া। তাছাড়া যারা ব্যাক্তি-স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে কালোকে সাদা আর সাদাকে কালো বানাতে চান তারাও এসবের জন্য সমান দায়ী। এসবের প্রতিকারে দরকার সামাজিক, ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ ও অভিভাবকদের সচেতনতা।

কারণ পৃথিবীতে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত বিধান লঙ্গন করে যত নতুন নিয়মই মানুষ প্রণয়ন করেছে তা মানব সভ্যতার জন্য ভালো ফল বয়ে আনেনি। পুঁজিবাদ থেকে শুরু করে মার্কসবাদ বা সাম্রাজ্যবাদ সবকিছুর প্রভাব ইতিহাস খুব ভালো-ভাবেই পর্যবেক্ষণ করেছে।

ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত মার্কিন ইতিহাসবিদ রবার্ট কনকিওয়েস্টর দাবী করেছেন, “সাম্রাজ্যবাদী স্ট্যালিনের চালানো গণহত্যায় প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করা হয়।”

মার্কিন লেখক ও গবেষক বেলেন ফার্নান্দেজ এর “আল-জাজিরা”তে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে “পুঁজিবাদের ধ্বজাধারী আমেরিকা যুদ্ধ বাধানো এবং কর্পোরেট মুনাফা অর্জনের পেছনে এত বেশি সময় দেয় যে মৌলিক মানবাধিকার নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় সে পায় না।”

অথচ আজ যত মানবাধিকার, নারী অধিকার, বিশ্বশান্তি, যুদ্ধ-বিগ্রহ সহ সবকিছুর নেতৃত্ব দেয়া দেশ আমেরিকা নিজেই। তারাই একহাতে শান্তির পায়রা আরেক হাতে পারমানবিক বোমার সুইচ নিয়ে সবাইকে মানবতা শেখায়।

যেই আমেরিকা নারীদের স্বাধীনতার ধ্বজা ধরে ধর্মীয় মূল্যবোধ ছুঁড়ে ফেলে তাদেরকে ঘরের নিরাপদ পরিবেশ থেকে বের করছে তাদের দেশেই কি পরিমাণ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে তার নমুনা লক্ষ করা যায় ৬ অক্টোবর, ২০১৯ এ “কালের কণ্ঠ” অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে। এতে উল্লেখ করা হয় আমেরিকা সবচেয়ে বেশী ধর্ষণের তালিকায় ১৪ নাম্বারে অবস্থান করছে। আর বাংলাদেশের অবস্থান ৪০ তম।

তাছাড়া আমেরিকার অন্যতম নীতিনির্ধারণী সংস্থা RAND Corporation এর থিংক ট্যাংকারে যত প্রভাবশালী আছেন তাদের মধ্যে নারীদের উপস্থিতি প্রায় নেই বললেই চলে। বিষয়টি প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়শিংটনপোস্টে প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে। এতে তাদের ভিন্নধর্মী উদ্দেশ্যের প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়।

ঝংকার মাহবুব ভাই একবার লিখেছিলেন গ্রুপ স্টাডি এড়িয়ে চলার জন্য। কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন, “চার ঘণ্টা গ্রুপ স্টাডি করার পর দেখবা, ৩ ঘণ্টা ৫০ মিনিট গেছে- কে কারে রিজেক্ট করছে, কার সাথে কার ঝগড়া লাগছে, কার পোস্ট ভাইরাল হইছে, কোন সিনেমার ট্রেলার হিট খাইছে এসব আলোচনা করে।” তবে এখন দেখা যাচ্ছে ফ্রেন্ডদের সাথে গ্রুপ স্টাডি করতে গিয়ে শুধু স্টাডি নয় সাথে জীববিজ্ঞানের প্র্যাক্টিকেল ক্লাসও করা হচ্ছে!


- আতিকুর রহমান

(জানুয়ারী ১০, ২০২১)