ইউটিউব হেডঅফিস থেকে ফোন পেয়ে চমকে উঠলাম। অপর প্রান্ত থেকে কথা বলছে কোকিলকন্ঠী এক তরুণী। স্বয়ং ইউটিউব থেকে আমাকে ফোন দিয়েছে বিশ্বাসই করতে পারছি না।

“হ্যালো, স্যার। আপনিকি আতিকুর রহমান বলছেন?” শব্দ শুনে বিস্ময় কাটলো। তারমানে আসলেই ফোন দিয়েছে।

- জ্বি বলুন।

- স্যার, আমি ইউটিউব হেডঅফিস থেকে মিস এমা ওয়াটসন বলছি।

কাস্টমার কেয়ারের লোকগুলো আসলেই ভালো। কত সুন্দর করে “স্যার” ডাকে। নিজেকে ভিআইপি মনে হয়। খুশীতে তারাতারি বললাম,

- জ্বি মিস এমা বলুন।

- স্যার, আপনার জন্য একটা দারুণ সুখবর আছে।

বাহ! আবার সুখবরও আছে? আমারতো চ্যানেলও নেই। তাহলে আমার জন্য আর কি সুখবর থাকতে পারে।

উল্টো ইউটিউব আসার পর থেকেতো আমরা মানুষের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়ে গেছে। একসময় আমরা মানুষ ছিলাম। ইউটিউবাররা আসার পর সবাই “হাই গাইজ” হয়ে গেছি! 


যাক এত ভাবলে হবে না। মিস এমার সাথে বাকী কথা শেষ করি। বললাম,

- মিস এমা, সুখবরটা কি বলুনতো। আর অপেক্ষা করতে পারছি না।

- স্যার, এই বছর ইউটিউবের দর্শকদের মধ্যে নতুন একটি এওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। এওয়ার্ডটি হলো “ট্যালেন্ট অব দ্য ইয়ার”। আর এই বছর আপনি “ট্যালেন্ট অব দ্য ইয়ার” নির্বাচিত হয়েছেন। কনগ্রেচুলেশন স্যার।

আমি ৭০০ কোটি মানুষের মধ্য থেকে “ট্যালেন্ট অব দ্য ইয়ার” হইছি। বিশ্বাসই করতে পারতেছি না। মোশাররফ করিমের “আমার এতখুশি লাগে ক্যারে!” ডায়লগটা বারবার মনে পড়তেছে।

তারাতারি বললাম,

- কিন্তু আমি এমন কি করলাম যে আমাকে এই এওয়ার্ড দিতেছেন?

- দেখুন স্যার আপনি ইউটিউব থেকে অসংখ্য জ্ঞান নিচ্ছেন প্রতিদিন। আপনার মধ্যে অনেক ট্যালেন্ট লুকিয়ে আছে।

- আপনারা কিভাবে এটা বুঝতে পারলেন?

- আপনি প্রতিদিন ইউটিউব থেকে ওয়াজ দেখেন। অর্থাৎ, আপনি ধার্মিক মানুষ। রান্নার রেসিপি দেখেন, তারমানে আপনি রন্ধন শিল্পেও পারদর্শী। বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখেন, অর্থাৎ আপনি বিভিন্ন বিষয়ে শিখতে ভালোবাসেন। সিআইডি-আদালত দেখেন মানে আপনি গোয়েন্দাদের মতো জটিল চিন্তা করতে পারেন। তাছাড়াও আপনি প্রতিদিন কার্টুন দেখেন। বুঝা যাচ্ছে আপনার মধ্যে শিশুদের মতো সরল একটা মনও আছে। তাই আপনাকে আমরা “ট্যালেন্ট অব দ্য ইয়ার” এওয়ার্ড দিচ্ছি।

- কিন্তু আমি.....

- না, কোনো কিন্তু আমরা শুনব না। আপনার জন্য বিমানের টিকিট পাঠিয়ে দিয়েছি। আগামী সপ্তাহে আমেরিকা এসে পুরষ্কার গ্রহণ করবেন।

- কিন্তু.....

- স্যার কোনো কিন্তু নেই। স্বয়ং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সাহেব অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। উনার হাত থেকেই আপনাকে এওয়ার্ড তুলে দেওয়া হবে।

কি আর করা। যাইতেই হবে। যাক ফ্রীতে আমেরিকা ঘুরাও হবে আবার জো বাইডেন কাকুর সাথে দেখাও করা যাবে। রথ দেখা আর কলা বেচা দুটোই হলো।


পরের সপ্তাহে জো বাইডেন কাকুর হাত থেকে পুরষ্কার নিয়ে হাসিমুখে সেলফি তুললাম। তারপর সাংবাদিকদের সামনে সাক্ষাৎকার দিতে হবে। আসলেও ভিআইপি হয়ে গেছি।

সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলেন,

- “ট্যালেন্ট অব দ্য ইয়ার” এওয়ার্ড পেয়ে আপনার অনুভূতি কি?

- জ্বি, আমি অনেক আনন্দিত।

- আচ্ছা আপনি প্রতিদিন ইউটিউব থেকে এত ক্যাটাগরির ভিডিও দেখতেন এবং নিজের জীবনে সেগুলো প্রয়োগ করতেন। কিভাবে এত সময় ম্যানেজ করতেন?

- দেখুন আমাদের বাড়িতে একটাই মোবাইল আছে। এইটা দিয়েই প্রতিদিন আব্বু ওয়াজ দেখে, আম্মু রান্নার রেসিপি দেখে, একবোন টিউটোরিয়াল দেখে, আরেকবোন সিআডি-আদালত দেখে আর ছোটবোনটা কার্টুন দেখে!

- তাহলে আপনি যে এওয়ার্ড পেলেন তবে আপনি কি করতেন সারাদিন?

- মোবাইলে আমার আইডি থেকেই সবাই ভিডিও দেখে। তাই কে কতক্ষণ ফোন চালাবে আমি সারাদিন সেই সিরিয়াল দিতাম🤣!

বলা শেষ করতে পারলাম না আয়োজক কমিটিরা দেখি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ছে। পেছনে ধপাস করে শব্দ হলো। ওমা একি! জো বাইডেন কাকু দেখি মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেছেন।

এওয়ার্ড নিয়ে চিন্তা করার সময় নাই। গণধোলাই এর গন্ধ পাচ্ছি। এক্ষুণি পালাতে হবে😀



~ আতিকুর রহমান

(২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩)