“তোর জ্বালায় আর বাঁচি না। তোরে আমি জীবনেও মানুষ করতে পরতাম না” কথাগুলো ছোটবেলা থেকেই আম্মুর মুখে শুনে আসছি প্রতিনিয়ত।

বিশ্বাস করতাম না কথাগুলো। ভাবতাম আমিতো মানুষই। আমাকে আবার মানুষ করার কি আছে?

ভুল ভাঙ্গলো যখন স্কুলে স্যার একদিন বললো,“তোমাকে মানুষের মত মানুষ হবে হবে”।

কথাটা এক কান দিয়ে ঢুকে আরেক কান দিয়ে বেরিয়ে যায়নি। মাথার ভেতরেই ঘুরঘুর করছিল।

বাক্যটা যে কতটা ভাবগম্ভীর তা বুঝতে পারলাম বার্ষিক পরিক্ষার প্রশ্নপত্র দেখে। ভাব-সম্প্রসারণ এসেছে,”পশুর উদরে জন্ম নিলেই পশু হওয়া যায় কিন্তু মানুষের উদরে জন্ম নিলেই মানুষ হওয়া যায় না”।

থুতনিতে হাত ঠেকিয়ে অনেকক্ষন ভেবেছিলাম সেদিন কিভাবে মানুষ হওয়া যায়?

ভাবনার জগতে ছেদ পড়ল পরীক্ষা শেষ হওয়ার সংকেত দেওয়া ঘন্টার শব্দে। রবীন্দ্রনাথের চিন্তাশীল গল্পের মত চিন্তা করতে করতেই পুরো পরীক্ষার সময়টা কাটিয়ে দিলাম।

রেজাল্টের দিন দেখি পুরো ক্লাসে একমাত্র আমিই ফেল করেছি। তাও আবার বাংলাতে!

হেডস্যার সকলের সামনে আমাকে দাঁড় করিয়ে বললেন,“কেউ কোনোদিন বাংলাতে ডাবল 0 পায়? তুই জীবনেও আর মানুষ হবি না।” 

স্যারকে কি করে বুঝাই যে, এই মানুষ হওয়ার উপায় নিয়ে ভাবতে ভাবতেইতো আমি বাংলাতে ফেল মেরেছি।”

ছুটির পর স্যারের সাথে দেখা করে এক ব্যাগ উপদেশ নিয়ে লেখাপড়ায় মনযোগ দিলাম। এসএসসি টেস্ট পরীক্ষায় তৃতীয় হলাম!

স্যার আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন,” তুই এতদিনে মানুষের মত মানুষ হয়েছিস বাবা। আশাকরি ভবিষ্যতে আরো অনেক বড় হবি”।

আমি স্যারকে বললাম,“আপনাদের সামনে নাহয় মানুষ হলাম। কিন্তু গতকাল গুগলে ঢুকতেই গুগল আমাকে জিজ্ঞেস করল Are you human?

তখন অনেকগুলো ছবি মিলিয়ে মিলিয়ে মানে গুগল ক্যাপচা মিলিয়ে প্রমান করতে হয়েছে আমি মানুষ।

যদি সবজান্তা গুগলের চোখেই আমি মানুষ না হতে পারি তাহলে আমি কিসের মানুষ হলাম?”

স্যার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,“ইয়ে মানে গুগলের চোখে আমিও এখনো ঠিকঠাক মানুষ হতে পারলাম নারে!”


- আতিকুর রহমান