ক্যারিয়ার নিয়ে আমরা সবাই চিন্তিত। তাই নয় কি? 

হ্যাঁ। দেশে যখন বেকারত্বের বসন্ত তখন ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করা মোটেও অমূলক নয়। বরং নিজেকে অধিকতর যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলাটাই মূখ্য বিষয়। এর জন্য দরকার কঠোর পরিশ্রম।

নাহ, ভুল বললাম। কঠোর পরিশ্রম করাটা মূখ্য বিষয় নয়। তাহলে মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগতে পারে “পরিশ্রমই সফলতার চাবিকাঠি” প্রবাদটি কি মিথ্যা? প্রবাদটি মিথ্যা নয়। 

কারন পরিশ্রম করতেই হবে। তবে সেটা হতে হবে সঠিক উপায়ে। সহজ ভাবে বললে, স্মার্ট / কৌশলী পারিশ্রম করতে হবে। নয়তো অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় ও শ্রম দুটোই খরচ হবে।

ক্যারিয়ার ক্লাব কি? এবং কেন প্রয়োজন?

গৎবাঁধা পড়াশোনা ও সার্টিফিকেটের ঝুলি দিয়ে একসময় চাকরির বাজারে সহজে প্রবেশ করা গেলেও বর্তমানের প্রতিযোগীতাপূর্ণ বাজারে প্রবেশ করা যায় না। প্রয়োজন হয় অতিরিক্ত দক্ষতার। যাকে আমরা এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস নামেই চিনে থাকি।

এই প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, অভিজ্ঞদের দিকনির্দেশনা ও প্রস্তুতি। এগুলো গ্রহন করতে হয় শিক্ষা জীবনেই। এর পর এই সুযোগ বড় পরিসরে আর থাকে না। সুতরাং, সুযোগের সঠিক ব্যবহার করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আর এধরনের কার্যক্রমের ব্যবস্থা ও সুযোগ তৈরি করে দেয় ক্যারিয়ার ক্লাব।

মূলত ক্যারিয়ার বলতে আমরা কি বুঝি।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর অর্থাৎ লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করাকেই আমরা সাধারন ভাবে ক্যারিয়ার হিসেবে বুঝি। তবে এটাই সম্পূর্ণ অর্থ বুঝায় না। 

মূলত ক্যারিয়ার বলতে কোনো ব্যক্তির কর্মময় জীবনকে বুঝায়। অর্থাৎ, এই সময়টা সে নিজের উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য পেশা হিসেবে ব্যয় করে।

ক্যারিয়ার ক্লাব কি?

প্রতিযোগীতাপূর্ণ বিশ্বে তাল মিলিয়ে চলার জন্য নিজের মেধা ও দক্ষতাকে প্রতিনিয়ত আপডেট রাখতে হয়, কৌশলী উপায়ে পরিশ্রম করতে হয়, উপযুক্ত দিকনির্দেশনা মেনে চলতে হয়। আর এই সকল সুযোগ করে দেয়ার একটি প্লাটফর্ম হলো “ক্যারিয়ার” ক্লাব। 

ক্যারিয়ার ক্লাব কেন প্রয়োজন?

শুধুমাত্র একাডেমিক পড়াশোনা করেই ভালো জায়গায় যাওয়া সম্ভব হয় না। তার জন্য প্রয়োজন সিলেবাসের বাইরের স্কিলগুলো। পেশাগত জীবনে উন্নতি করতে দুটি জিনিস খুবই প্রয়োজনীয়।

  1. নেতৃত্বের গুণাবলী, যোগাযোগ দক্ষতা, দলবদ্ধ হয়ে কাজ করার দক্ষতা, ইংরেজী ভাষায় যোগাযোগ দক্ষতা ইত্যাদি।

  2. সফট স্কিলস। অর্থাৎ, তথ্য প্রযুক্তির সাথে আপডেট থাকার দক্ষতা। বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার এর ব্যবহার জানা থাকা আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই দক্ষতাগুলো বিকাশে সবচেয়ে বেশী ভূমিকা রাখতে পারে ক্যারিয়ার ক্লাব। কারন, প্রত্যেকেই কোনো না কোনো ক্ষেত্রে দক্ষ। তাই একে অপরের সাথে যদি তাদের দক্ষতা বিনিময় করে তবে সকলেই নিজেদের এগিয়ে নিতে পারে। 

দলবদ্ধ ভাবে এসব কাজ করতে করতেই নেতৃত্ব, যোগাযোগ দক্ষতা, টিমে কাজ করার দক্ষতা ইত্যাদি আপনা আপনি বিকশিত হয়। একারনে ক্যারিয়ার ক্লাব শিক্ষার্থীদের নিকট খুবই প্রয়োজনীয়।

ক্যারিয়ার ক্লাবের উপকারিতা


কি কি উপকার পাওয়া যাবে?

একটি ক্যারিয়ার ক্লাব নিয়মিত বিভিন্ন ক্যারিয়ার বিষয়ক কর্মশালা, প্রশিক্ষণ, সেমিনারের আয়োজন করে থাকে। তার ফলে পরিবর্তনশীল অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তি নির্ভর চাকরির বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন প্রকার দক্ষতা উন্নয়ন করা সহজেই সম্ভব হয়।

পাবলিক স্পীকিং, প্রেজেন্টেশন প্রোগ্রাম, লিডারশিপ ডেভেলাপমেন্ট, সিভি রাইটিং এবং আনুষঙ্গিক দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করে থাকে ক্যারিয়ার ক্লাব। তাছাড়া বিভিন্ন প্রতিযোগীতা আয়োজন করে মেধা বিকাশ কার্যক্রম চলতে থাকে সারা বছরই। তাই শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিভা বিকাশের একটি প্লাটফর্ম হিসেবে পায় ক্যারিয়ার ক্লাবকে।

দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা গ্রহন করতে হলে এই দক্ষতাগুলোকে খুব বেশি মূল্যায়ণ করা হয়। তাই এই দক্ষতাগুলো না থাকলে বিদেশের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করার সময় পিছিয়ে থাকতে হয়। যা মোটেও কাম্য নয়। 

Releted: জীবনে সঠিক বন্ধু বাছাই করার গুরুত্ব

লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্যারিয়ার ক্লাবে সময় দিয়ে এই দক্ষতাগুলো অর্জন করে নিজেকে অন্যদেরে তুলনায় এগিয়ে রাখাটাই তাই সবচেয়ে ভালো অপশন।

স্নাতক পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থীর সামনে থাকে হাজারো স্বপ্ন। সেই সাথে থাকে লুকায়িত প্রতিভা। তাই স্বপ্নের সাথে প্রতিভার যোগসাগশ তৈরি করতে পারাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। 

এই গুরু দায়িত্ব পালন করেন ক্যারিয়ার ক্লাবের সিনিয়র ও অভিজ্ঞ সদস্যগণ। তাতে একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে উপযুক্ত দিক নির্দেশনা পাওয়া সহজ হয়।

অর্থাৎ, বুঝা যাচ্ছে একটি ক্যারিয়ার ক্লাব শিক্ষার্থীদের ভাবিষ্যত লক্ষ্য নির্ধারনে ভূমিকা পালন করে। এবং বিভিন্ন সেক্টরে সফল ব্যক্তিদেরকে বিভিন্ন সেমিনারে আমন্ত্রণ করে উনাদের কাছ থেকে ক্যারিয়ার বিষয়ক সুস্পষ্ট ও বাস্তব চিত্র সকলের সামনে তুলে ধরে। এবং উনাদের সংগ্রামের গল্পগুলো শিক্ষার্থীদেরকে উজ্জীবিত করে।

সুতরাং প্রতিটি শিক্ষার্থীর উচিত তাদের নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যারিয়ার ক্লাবে যুক্ত হওয়া। তাতে নিজের লেখাপড়া, ক্যারিয়ার, নেটওয়ার্কিং সহ সকল ক্ষেত্রেই আশানুরূপ সাফল্য অর্জন কারা সহজ হবে।


- আতিকুর রহমান