সুইসাইড করতে যাচ্ছি। আত্মাটা ধুকধুক করছে। আনমনে ভাবছি আত্মহত্যা করবো তাও আবার নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে করতে হবে। কেন? যেকোনো জায়গায়ই তো করা যায়।

তীব্র গতিতে চলা অটোরিকশাটা হঠাৎ ব্রেক কষেছে ফলে চিন্তার যোগসূত্রটা ছিন্ন হয়ে গেল। যদিও তারিখ ঠিক করা ছিল আরো ৩ দিন আগে। কিন্তু নানান চিন্তা-ভাবনা করতে করতে ৩ দিন দেরী হয়ে গেল।

যাক দুনিয়া থেকে যেহেতু যেতেই হবে তাহলে আজ আর দুদিন পর একই কথা। আমার আত্মহত্যার পদ্ধতিটাও অদ্ভুত রকমের। সবাই গলায় দড়ি দিয়ে, বিষ পান করে এই কাজ করে। আর আমি অফিসিয়াল ভাবে হাসপাতাল থেকে ইঞ্জেকশন নিয়ে এই কাজ করবো।

প্রথমে ভেবেছিলাম আমিই বিশ্বে প্রথম এই ভাবে সুইসাইড করছি। ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণ না হোক রূপার অক্ষরে হলেও আমার নাম লেখা থাকবে।

কিন্তু আমার এই অদ্ভুতুড়ে স্বপ্নে পানি ঢেলে দিল একটি নিউজ। অস্ট্রেলিয়ার ১০৪ বছর বয়সী একজন বিজ্ঞানী মশাই কয়েকবছর আগে এই প্রক্রিয়ায় অর্থাৎ ইঞ্জেকশন নিয়ে পরপারে চলে গেছেন। তারমানে আমরা বাঙ্গালীরা যাকিছুই করি সবই ডুপ্লিকেট!

এসব ভাবতে ভাবতে হাসপাতালে পৌঁছালাম। ভেবেছিলাম একজন অসম্ভব সুন্দরী নার্স আমাকে কোমল কণ্ঠে বলবে, "আসুন স্যার, আপনাকে ইঞ্জেকশন দিয়ে দেই"।

তারপর ইঞ্জেকশন দিয়ে দেবে। আর আমি সেই কণ্ঠের মোহময়তায় অভিভূত হয়ে যাব। তার সম্বিত ফিরে দেখব আর মাত্র কয়েক সেকেন্ড মেয়াদ আছে আমার। 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “অপরিচিতা” গল্পের কল্যাণী এর মতো সুমধুর কণ্ঠের ঝংকার কানে বাজতে বাজতে জীবনের শেষ কয়েকটি সেকেন্ড কেটে যাবে। তারপর আবার পৃথিবীতে বাঁচতে মন চাইবে। কিন্তু আমার সময় যে শেষ! বেঁচে থাকার আফসোস নিয়েই বিদায় হব নশ্বর দুনিয়া থেকে।

কিন্তু হাসপাতালে দেখি আমার কল্পনা ভঙ্গ করে মধ্যবয়সী একজন লোক ইঞ্জেকশন হাতে দাঁড়িয়ে আছে। ধুর!!!

ভাবছিলাম নার্সের সুমধুর কণ্ঠের মোহময়তার কবলে পড়ে হলেও পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে চাইব। কিন্তু আফসোস নিয়ে পৃথিবী ছাড়ব। বেশ ইন্টারেস্টিং ব্যাপার! কিন্তু এই কাঠখোট্টা টাইপের চাচাকে দেখে আমার কল্পনার সবকিছু মাটি হয়ে গেল।

তাই রাগ ও ক্ষোভের সাথেই বললাম,

- মরার ইঞ্জেকশনইতো দিবেন। দেন তাড়াতড়ি মরে যাই।

ইঞ্জেকশন পুশ করে সেই চাচা বলল,

- ১ম ডোজ দিয়া দিলাম। ২৮ দিন পরে ২য় ডোজ নিয়েন।

- আপনার কি মাথা খারাপ? কি বলতেছেন এইগুলা? আমিতো সুইসাইডের ইঞ্জেকশন নিতে আসছি। কিছুক্ষণ পরেই মারা যাবো। আমি ২৮ দিন পরে কিভাবে আসবো?

- আপনারে করোনার ভ্যাকসিন দিছি। টিভিতে দেখেন না যে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে করোনা রোগী মারা যাইতেছে। তো এহন ভ্যাকসিন ছাড়া মরলে পরকালে গিয়া যহন মাস্ক ছাড়া ঘুরাঘুরি করবেন তহন কিন্তু করোনা ধরবো। তাই আগে থেকেই প্রটেকশন দিয়া দিতাছি!


- আতিকুর রহমান

(২৬ অক্টোবর, ২০২১)