“প্রাচীনকালে নাকি প্রেমের জন্য ক্ষেপা ষাঁড়ের চোখে লাল কাপড় বাঁধতে যেত পুরুষরা। খুঁজে আনতো ১০৮ টা নীল পদ্ম।”

কি ভাবছেন প্রেমের উপাখ্যান লিখব?

না। বুঝাতে চাচ্ছি লাল কাপড় দেখলে ষাঁড় কিভাবে তেড়ে আসে তার নমুনা।

আজকে গরুর হাটে গেলাম লাল রঙ্গের গেঞ্জি গায়ে দিয়া। নিশ্চয় ভাবতাছেন আমি বেআক্কেল? জ্বি না ভুল ভাবতাছেন। আমি বেশি চালাক! কেমনে?

দুইদিন যাবৎ বিটিভিতে দেখতেছি তাজা ও সুস্থ গরু চেনার নিয়মাবলী। এর মইধ্যে একটা হইছে, লেজ ধইরা টান দিলে যদি গরু নড়াচড়া করে আর পায়ের গোশতে চাপ দিয়া ধরলে যদি আগের অবস্থায় সাথে সাথে ফিরে আসে তাইলে সেইটা ভালা গরু।

তো আপনেরাই কন যে প্রত্যেক গরুর লেজ কি আর পরিষ্কার থাকে? তো এর জন্যি একটা ভালা বুদ্ধি বাইর করছি।

ঐযে কইছিলাম লাল গেঞ্জি গায়ে দিয়া বাজারে গেছি। তো যেই গরুই আমারে দেইখা গুঁতা দেওনের লাগি শিং উঁচা কইরা আসে সেইটাই হইলো তরতাজা গরু। বাকিগুলাতে Something is Wrong!

    Related: রম্য: কিপ্টুস দাদার খাসি

এই সিস্টেমে কয়েকটা গরু টেস্ট করার পরে আশেপাশে ছড়াইয়া গেলো যে, নতুন সিস্টেমে তরতাজা গরু খুঁইজা বাইর কইরা দিতাছে আতিকে। সব ক্রেতারা মিইল্যা লাল কাপড়-ওয়ালা মানুষ খুঁজতাছে।

কিন্তু বাজারে সবাইতো পণ্ডিত লোক। কেউ গুঁতা খাওনের ভয়ে লাল কাপড় গায়ে দেয় নাই। তো আমারে ধরতাছে সবাই মিইল্যা।

করিম চাচার সাথে দেহি আরেকজনের বাকবিতণ্ডা চলতাছে। জিগাইলাম কি হইছে চাচা? চাচা কইলো,

- দেখ, তোরে আমি ছোড থাকতে কত কোলে কইরা পালছি। এহন তুই আমারে আগে তাজা গরু বাইর কইরা দিবি। আর এই হারামজাদা বলতাছে ওরে আগে দেওনের জন্যি।

- আইচ্ছা চাচা। চলেন আপনেরে আগে খুঁইজা দেই। ওনারে পরে দিতাছি।

এইভাবে ৭/৮ জনরে তরতাজা টাটকা গরু খুঁইজা দিছি। বারবার তো আর টাইমিং ঠিক হয় না। ঠিক টাইমে গরুর সামনে থেইকা না সড়তে পারলে গুঁতা খাইতে হবে নিশ্চিত। তাও আবার দেশি গুঁতা না একেবারে রামগুতা!

    Related: রম্য: বানান বিভ্রাট

মাথায় বুদ্ধি আইলো আমিতো চাইলেই এহন গরু খোঁজার জন্যি চার্জ/ফী নিতে পারি। জীবনের ঝুঁকি নিয়া মাগনা মাগনা আর কত? যেই কথা হেই কাম। কইলাম প্রতি গরুর জন্যি ২০০ টাকা কইরা দিতে হইব।

পাশের গ্রামের এক চৌধুরী সাহেব আমাকে নিলেন গরু খুঁজে দেওয়ার জন্যি। তিনি কালো গরুটা দেখাইতেই সামনে গেলাম।

ইশশ! গুঁতা খাইতে খাইতে বাইচ্চা গেছি। তারমানে গরুটা টাটকা। চৌধুরী সাহেব দেখি খুশি হইয়া ১০০০ টাকার নোট বাইর করতাছে মানিব্যাগ থেইকা!

যাক আল্লাহ এতদিনে আমার দিকে মুখ তুইল্লা তাকাইছে। বাপের কাছ থেইকা আর বেকার উপাধি নিয়মিত শুনতে হইতো না।

হাতটা অর্ধেক বাড়াইছি টাকাটা নেওনের লাগি। জীবনের প্রথম আয়, ফিলিংসাটাই আলাদা। হঠাৎ কইরা বাপের হুংকার কানে আইতেই হাতটা কচ্ছপের মাথার মতো পকেটে ঢুইক্যা গেলো। বললাম,

- জ্বি আব্বু। কিছু বলবেন?

- তোরে আমি লেহাপড়া শিহাইয়া মানুষ করতাছি এইতা ধান্ধাবাজি করার জন্যি? এহন সোজা বাড়ি চল। নাইলে হাতো গরুর লাঠিডা দেখছোস?

তারপর আর কি নিজের জীবন বাজী রাখা পেশার প্রথম উপার্জনের আশা জলাঞ্জলি দিয়া বাড়ির পথ ধরলাম। নাইলে পিঠের ছাল থাকতো না।

কোন দার্শনিকে যেন বলছিলো, “অভাগা যেদিকে যায়, সাগর শুকিয়ে যায়”। আজকে মনে হইতাছে দার্শনিকসাবরে বুকে জড়ায়া নিয়া কই, “ভাইসাব, আপনের বাপও কি আমার বাপের মতই আছিল নাকি?”


- আতিকুর রহমান

(১৮ জুলাই, ২০২১)