রম্য-গল্প-কৃপন-কিপ্টে-ছাগল-চুরি

বিরিয়ানীর গন্ধে মৌ মৌ করতাছে আমাদের পার্টি এরিয়াডা। খাসীর গোস্তের বিরিয়ানি বইলা কথা। পেটের ক্ষিধাডা দুই চারগুন বাইড়া গেছে।

কি ভাবতাছেন জন্মদিনের পার্টি?

জ্বি না। বড়সড় একখান খাসি পাইছি কুদ্দুস দাদার কাছ থেইকা। এজন্যিই এই পার্টি।

সন্ধার পরে রাস্তার কোনায় বইসা ৭ বন্ধু আড্ডা দিতেছিলাম। বিষয় হইলো কেমনে কুদ্দুস দাদার কাছ থেইকা খাসিটা দখল করতে পারমু।

একেকজন একেক বুদ্ধি দিতাছে। তবে আমাদের উদ্দেশ্য চুরি করা না। বরং বুদ্ধি খাটায়া খাসিটা হাত করমু।

সন্ধার সময় বাজারে দেখছিলাম বুড়া কুদ্দুস দাদা ইয়া মোটা একখান চশমা গায়ে দিয়া খাসি কিনতেছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই এই রাস্তায় আইসা পড়বো।

 রাস্তার দুই পাশে ঘন জঙ্গল। এই জঙ্গলের জায়গাটাতেই যা করার করতে হইবো।

শেষমেষ আমার বুদ্ধিই সবাই মাইন্যা নিলো!

রাকিব আর নাদিমরে পাঠাইলাম রান্নার আয়োজন করতে। আর আশিক গেল তার বিখ্যাত কেটলিতে চা বানানোর জন্য।

প্ল্যান অনুযায়ী সবার আগে রাব্বি গেল,

- দাদা, এই কুকুরটা কই থেকে আনলেন? বেশ বড়সড় কুকুর।

- এই বেডা কি কস্? আমি খাসি আনলাম ১০ হাজার টাহা দিয়া।

- আরে না দাদা। এইডা ভালো জাতের কুকুর। আমার খালাতো ভাই এই জাতের একটা কুকুর পালে তো তাই দেইখা চিনলাম। আইচ্ছা যাইগা।

দাদার মনে কিছুটা সন্দেহ ঢুকলো। তবে পাত্তা দিল না। নাতি মানুষ একটু আধটু শয়তানি করতেই পারে।


এইবার নাছিম গেল,

- কি দাদা, এত্ত সুন্দর কুকুরটা কই থেকে আনলেন?

- শয়তানি করিস না। যা তোর কাজে যা।

- দাদা, সত্যি কইতাছি। আপনের কুকুরটা বিদেশি জাতের। একেকটার দাম ১০-১২ হাজার টাহার মতন।

এইবার অন্ধকারের মধ্যেই মোটা চশমার কাঁচের ভিতর দিয়াই কোনো রকমে তাকায়া রইছে খাসিটার দিকে। এত পরিমান কিপ্টা যে, একটা লাইটও কিনে না।

.

এইবার সামনে পড়লো বাপ্পি,

- আরে দাদা, এই বুড়া বয়সে কুকুর পালার শখ হইছে?

- তোর আগে আরো ২ জনে কইয়া গেলো এইডা কুত্তা। তুইও কইতাছস?

- তো দাদা, কুকুররে কি গরু-ছাগল কইয়াম নাকি?


এইবার দাদা সত্যি সত্যি চিন্তায় পড়ছে। তারপরে আমার সিরিয়াল,

- দাদা, কুকুরটা কত দিয়া কিনলেন?

- আতিকরে এইডা কি আসলেই কুত্তা নাকি? সবাই কইতাছে। কিন্তু আমিতো খাসি কিনছিলাম।

কোনোরকমে হাসি চাপায়া কইলাম,

- দাদা, যা ভুল করার করছেন। এহন এইটা বাড়িতে নিয়া গেলে যদি সবাই জানতে পারে আপনে হাট থেইকা কুকুর কিনে আনছেন তাইলে আপনের মান-সম্মান থাকবো?

- তাওতো ঠিকই কইছোস। তাইলে এহন কি করতাম?

- তাইলে কুকুরটারে এই জঙ্গলেই ছাইড়া দিয়া বাড়ি চইলা যান। মান-সম্মানটাই বড় কথা।

.

তার পরে দাদা জঙ্গলে খাসিটারে ছাইড়া দিতেই আমরা ধইরা নিয়া জবাই করলাম। সেইটা দিয়াই আজকে বিশাল পার্টি হইতেছে!

আরেকটা কথা আপনাদের কানে কানে কইয়া যাই, কাওরে আবার বইলেন না। এলাকার বিখ্যাত ধনী কিন্তু কিপ্টুস এই কুদ্দুস দাদারেও কিন্তু দাওয়াত দিছি। 


- আতিকুর রহমান

(২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১)