রাস্তায় ধুলো উড়িয়ে হনহন করে একদল মধ্যবয়সী মহিলা হেঁটে যাচ্ছে। সাথে বিকট শব্দে স্লোগানও তুলছে, “মানি না, মানবো না”!

বুঝলাম না হঠাৎ করে কেন এমন আন্দোলন করতে হচ্ছে তাদের? আমাদের এলাকায়তো কোনো নারী নির্যাতনের ঘটনাও তো ঘটেনি। কিন্তু কাউকে কিছু বলার সাহস পেলাম না।

এইতো পাশের বাসার শেফালী আন্টিও দেখি মিছিলে যাচ্ছে! যাক তাহলে একজন পরিচিত মানুষ পেলাম। ওনার কাছ থেকেই জানার চেষ্টা করি।

ধুকধুক করা হৃদপিণ্ডকে বুকের খাঁচায় আটকে রেখে ওনার কাছ থেকে আন্দোলনের বিষয় বস্তু জানার জন্য এগুচ্ছি। সক্রেটিস বলেছিল, “নিজেকে জানো”।

কিন্তু এখন গুরু সক্রেটিসের কথা শুনে বসে থাকলে চলবে না। বরং মিছিলের কারণ জানতে হবে।

- আন্টি, কি ব্যাপার দলবল নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?

- তা আর বলো না বাবা। এইবার সরকার এইটা কোনো কাজ করলো?

- কেন আন্টি? সরকার আবার কার গরম ভাতে পানি দিছে?

- সরকার আমাদের “পাশের বাড়ির আন্টি কল্যাণ সমিতি” এর বাক-স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে।

- প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন আগে বলেছিল, “আপনাদের হাতে হাতে মোবাইল ফোন কে দিয়েছে? আওয়ামীলীগ সরকার”। কিন্তু এটাতে আমরা নিজেদের টাকায় ফোন কিনেও সরকার ক্রেডিট নিছে। কিন্তু মালিকানাতো নেয়নি। সুতরাং কিভাবে আপনাদের বাকস্বাধীনতা বিঘ্নিত হল?

- ফোন নিয়েও ঝামেলা হয়নি। এইযে আজকে সরকার সবাইরে অটোপাশের রেজাল্ট দিল আমরাতো পাশের বাসার ভাবীদেরকে জিজ্ঞেস করতে পারছিনা তাদের ছেলেরা পাশ করেছে কি না? আমাদেরকে মুখ বন্ধ করে থাকতে হচ্ছে। এটা আমাদের বাকস্বাধীনতা হরণ করা নয়?

শেফালী আন্টি একদমে কথা শেষ করলেন। তার চোখে মুখে রাজ্যের যত রাগ-ক্ষোভ উপচে পড়ছে। যেন সরকারকে এই মূহুর্তে সামনে পেলে দফারফা করে ছাড়বে। হঠাৎ আন্টি বলে বসলেন,

- আতিক, তুমি যেন এবার কোন ক্লাসে পড়?

- এইতো আন্টি এবার আপনাদের দোয়ায় অটোপাশ করে আজকে রেজাল্ট হাতে পেলাম।

- ওরে হারামজাদারে!!! তোদের ব্যাচের জন্যই আজকে আমাদের আন্দোলন নিয়ে মাঠে নামতে হল। আর তুই আমার সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রসিকতা করছিস? আজ তোর একদিন কি আমার একদিন! ওরে তোরা মিছিল নিয়ে এদিকে আয়।

এটা শুনে প্রাণটা হাতে নিয়ে দৌড়াচ্ছি। পেছনে শেফালী আন্টি সহ পুরো মিছিল আমাকে দৌড়াচ্ছে। হাতটাও ঘেমে গেছে। যেকোনো মূহুর্তে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া প্রাণটা হাতফসকে বেড়িয়ে যেতে পারে।

এদিকে দৌড়াচ্ছি আর গলা ছেড়ে চিল্লাচ্ছি “বাঁচান, অটোপাশ বিরোধিনীদের হাত আমাকে থেকে বাঁচান। আমি আর জীবনেও অটোপাশ করব না। জোড় করে অটোপাশ দিলেও নিব না!!!”


- আতিকুর রহমান

(৩০ জানুয়ারী, ২০২১)