বিরিয়ানির-হাসির-গল্প

আজ ভোরে পূর্বাকাশের রক্তিম সূর্যটা যখন উঁকি দিচ্ছে সেই মূহুর্তেই বন্ধু রাজীবের ফোন।

বললাম, “গতকাল রাতে সাইকেল নিয়ে রাস্তায় পড়ে গিয়েছিলাম একজন বৃদ্ধ লোককে বাঁচাতে গিয়ে।তাই মাথার কাছে একটু কেটে গেছে। হাসপাতালে যাব ডাক্তার দেখাতে। তোর সাথে পরে কথা বলি।”

দুপুর বেলা গফরগাঁও স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বের হলাম।

খুব গরম পড়েছে। ঘাম ঝরছে দরদর করে।

এমন সময় পাশের একটা হোটেল থেকে বিরিয়ানির গন্ধ নাকে এল। তৎক্ষণাৎ জিভে জল চলে এল!

পকেটে হাত ঢুকিয়ে মানিব্যাগটা ঠিক আছে কিনা দেখে নিয়ে ঢুকে পড়লাম হোটেলে। আয়েশ করে বিরিয়ানি মুখে দিয়ে চিন্তা করলাম ফেসবুকে একটা সেলফি আপলোড করে আসি।

খাওয়া শেষে দেখি অতি ইমোশনাল কমেন্ট আসতেছে! ব্যাপার কি? কিছু কমেন্ট উল্লেখ করলাম:

১. বন্ধু তুমারে তো দাফন করার আগেই জান্নাতে গিয়া বিরানী খাইতাছো।

২. দোয়া কইরো আমরাও যাতে মরার সাথে সাথে জান্নাতে যাইতে পারি।

৩. ওয়াও দোস্ত তুই কি এমন ভালো কাজ করছিলি যে, বেহেশতে বইসা ফেসবুক চালানোর সুযোগ পাইসছ? আমারে একটু শিখাইয়া দে না।

আমিতো শিহরিত! বুঝলাম না কেন সবাই এমন আধ্যাত্মিক কমেন্ট করতেছে।

তাই পরিচিত কয়েকজনের আইডি ঘুরে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম। যা দেখলাম তাতে আমি আতঙ্কে চিৎকার করে উঠলাম। এটা দেখে হোটেল মালিক ছুটে আসলো।

আমি উনাকে বন্ধুদের নীচের পোস্টগুলো দেখালাম। আপনারাও দেখুন:

১. রাকিব: আমাদের ছেড়ে অকালে চলে গেলা। আল্লাহ তোমার ভালো করুক।

২. বাপ্পি: খবরটা শুনে আমার চোখে অশ্রুর বৃষ্টি ঝরছে। ওপারে ভালো থেকো আতিক।

৩. আশিক: ভালো থাকিস আতিক। আমরাও আসছি।

৪.মিজান: আতিক অচেনা পথ ধরে চলে গেল আমাদের ছেড়ে।

৫. নাছিম : RIP আতিকুর রহমান আতিক। আমাদের জন্য অপেক্ষা করো।

৬. কাউসার: আমি তিন তলা থেকে লাফ দিয়েও বেঁচে আছি। আর তুমি আমাদের ছেড়ে এভাবে চলে গেলে আতিক?

৭. রনি: একসাতে এতদিন থাকলাম অথচ তুমি আমাদের ছেড়ে এত আগে চলে যাবে ভাবতে পারিনি। ভালো থেকো।

হোটেল মালিক আমাকে আড়চোখ একবার দেখে আরেকবার মোবাইলে পোস্টগুলো দেখছে!

তারপর ভয়ার্ত কণ্ঠে বললো, “আপনি উপরওয়ালার কাছ থেকে মেহমান হয়ে আমার হোটেলে এসেছেন। আপনার বিল দিতে হবে না। তবে হ্যাঁ আর কাউকে বইলেন না কথাটা। তাইলে কিন্তু আমার ব্যবসা লাটে উঠবো।”

বিষন্ন মনে হোটেল থেকে বের হয়ে জিহাদের সাথে দেখা। সে আমাকে দেখেই ভয়ে ৩ পা পিছিয়ে গেল। তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

- তু তু তুমি এখানে? কিভাবে এলে?

- এইতো। শেষবারের মতো একটু হাওয়া খেতে এলাম।

এইটুকু বলে চলে আসলাম।

কিন্তু এখন আমার নিজেরই সন্দেহ হচ্ছে! আমি আসলেই কি বেঁচে আছি? এতগুলো মানুষতো আর ভুল স্ট্যাটাস দিতে পারে না।

আবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফিরে ডাক্তারকে সব খুলে বললাম। প্রথমে ডাক্তার সাহেবও ভয় পেয়ে ছিলেন। পরে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বললেন যে আমি আসলে বেঁচেই আছি।

পুরোটাই ঐযে সকালে রাজীবকে মাথায় আঘাত পাওয়ার কথা বলে হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলেছিলাম সেখান থেকে এই কান ওই কান করে করে দুপুরের মধ্যেই আমার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে!

তাতে আমার কি? ফ্রিতে পেট ভরে বিরিয়ানি খাইতে পারলাম এটাই বড় কথা।

এখন নিশ্চিন্তে বাড়ি যাই কি বলেন?


- আতিকুর রহমান

(১২ জানুয়ারী, ২০২১)