মার্কেটিং এর কথা মাথায় আসলেই আমরা চিন্তা করি এড দিব, মানুষ এঙ্গেজ হবে, সেল আসবে। এটা যে একটা ভুল কনসেপ্ট সেটিই আজকে দেখবো।
হুটহাট এড দিয়ে বা কোনো ক্যাম্পেইন রান করে হয়তো কিছু সেল জেনারেট করা যায়। কিন্তু লং রানে এটা কোনো সাস্টেনেবল বিজনেস সিস্টেম না।
তাহলে কি ভাবে কি করতে হয়? সেটার একটা পার্ট অর্থাৎ, মার্কেটিং ফানেল সমন্ধে জানার চেষ্টা করবো। প্রথমে জানতে হবে ফানেল জিনিসটা কি।
সত্যি বলতে “ফানেল” জিনিসটি আমি প্রথম দেখেছি SSC পরীক্ষার জন্য কেমিস্ট্রির প্র্যাকটিকেল খাতা তৈরির সময়। অবাক হবেন না। ছোটবেলা থেকে এটাকে “তেলের কুপি” নামে চিনে এসেছি। অথচ বইয়ের ভেতর ঢুকে হয়ে গেছে ফানেল। যেমনটা, গ্রামের খইল্যা চাচা আমেরিকাতে গিয়ে মিস্টার খালিল হয়ে যায়!!!
তো মূল কথায় আসি। তেলের কুপি যেরকম উপর থেকে ছোট হয়ে আসতে থাকে ঠিক তেমন ভাবেই মার্কেটিং এর টার্গেট অডিয়েন্স বা প্রসপেক্ট ধাপে ধাপে ছোট হয়ে আসে। তাই সেটাকে মার্কেটিং ফানেল বলা হয়।
বিভিন্ন ধরনের ফানেল প্রচলিত রয়েছে। যেমন,
- AIDA Model
- Hourglass Funnel
- Deviating Model
- TOF-MOF-BOF
- ইত্যাদি
এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত ফানেল হলো, AIDA. এর ৪টি ধাপ রয়েছে। যথা:
- Awareness
- Interest
- Desire
- Action
অর্থাৎ, মার্কেটিং ক্যাম্পেইন এর শুরুতে বড় একটা টার্গেট অডিয়েন্সকে নিয়ে শুরু করতে হয়। তারপর সেখান থেকে ছাটাই হতে হতে শেষ পর্যন্ত খাঁটি নির্যাসটাই থাকে।
অর্থাৎ, একদম শেষে যারা থাকে তারা প্রোডাক্ট বা সার্ভিসটা ক্রয় করে। অথবা আমরা যেই একশনটি নেয়াতে চাচ্ছি সেটা নেয়।
আচ্ছা, মার্কেটিং এর ভাষায় না গিয়ে একটা গল্পের মাধ্যমে দেখি। কেমন?
কয়েকবছর আগে Blue Whale নামে একটি গেম বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। আপনার নিশ্চয় তখনকার কথা মনে আছে।
ধরুন গেমটি খেলা শুরু করেছিল কয়েক লাখ মানুষ। হিসাবের সুবিধার্ধে ধরলাম ৫ লাখ মানুষ। তারপর কয়েক পর্ব খেলার পর অনেকে বাদ দেয়। এরপর হয়তো ৩০তম পর্ব পর্যন্ত যেতে যেতে আরো অনেক মানুষ গেম খেলা বাদ দেয়।
সবশেষে ৫০তম পর্ব খেলার পর আত্মহত্যা করে মোট ১৩৩ জন।
অর্থাৎ, Blue Whale গেমটাকে ফানেল হিসাবে ধরলে ফানেলের লাস্ট স্টেজে গিয়ে পৌঁছায় মাত্র ১৩৩ জন।
তো একই ভাবে ধরি, আমরা দেশজুড়ে স্ক্যামার বানানোর একটি ট্রেনিং আয়োজন করলাম যে, “স্ক্যামিং করার ১০১ নিয়ম”!!! এখন যদি এটার জন্য AIDA মডেল দিয়ে মার্কেটিং ফানেল ডিজাইন করতে হয় তাহলে কিভাবে করবো?
১. Awareness
প্রথমেই দেশের পটেনশিয়াল স্ক্যামারদের টার্গেট করে একটা এড চালাবো। স্ক্যামিং কি? কিভাবে করে? লাভ কি? কতদিনে মিলিওনিয়ার হওয়া যাবে? এসব বিষয়ে।
এগুলো ধরুন ১ লাখ মানুষকে টার্গেট করে ক্যাম্পেইন করলাম।
২. Interest
এবার কিছু রিয়েল এক্সাম্পল দেখাবো। যেমন, ডেস্টিনি, রিং আইডি এগুলোর মালিকদের দিয়ে ভিডিও করাবো। তাদের ব্যাংকের স্ট্যাটমেন্ট দেখাবো।
তাহলে উদীয়মান স্ক্যামারেরা উৎসাহ পাবে। তারাও জীবনে কিছু একটা করার মতো সাহস পাবে। ফলে তাদের মনের মধ্যে দেশসেরা Scammer হওয়ার Interest জাগবে।
তবে এখানে কিছু ভালো মনের মানুষগুলো ঝরে যাবে। তারা ভাববে মানুষের ক্ষতি করা উচিত না, ইত্যাদি ইত্যাদি।
৩. Desire
এখানে এসে তাদের মধ্যে এমনিতেই উৎসাহ, আকাঙ্খা জাগবে। সেই সাতে যদি হালের MTFE এর মালিককে দিয়ে লেটেস্ট স্ট্র্যাটেজি এবং তার কিছু বিলাসবহুল গাড়ি-বাড়ি দেখাতে পারি তাহলে Desire অটোমেটিক মাথাচারা দিয়ে উঠবে।
এই ধাপেও অনেক মানুষ টিকতে পারবে না। আইনের ভয়, দেশ ছাড়ার ভয় ইত্যাদি মিলিয়ে ঝরে যাবে। যাক, আমাদের দরকার পটেনশিয়াল স্ক্যামার!!!
৪. Action
এটা সর্বশেষ ধাপ। এখানে এসে আদাজল খেয়ে স্ক্যামার হতেই হবে এমন মনোভাবের মানুষগুলোই টিকে থাকবে। অর্থাৎ, এরা আমাদের ট্রেনিং-এ এডমিশন নিবে।
এতগুলো ধাপ পেরিয়ে এখানে হয়তো ১ থেকে ২ হাজার স্ক্যামার ভর্তি হবে। কমও হতে পারে। পুরো রেজাল্টটা নির্ভর করবে টার্গেট অডিয়েন্স সেটিং, ক্যাম্পেইন ইলিমেন্টগুলো প্রোপারলি ব্যবহার হয়েছে কিনা, ভর্তি ফি নাগালের মধ্যে আছে কি না ইত্যাদি বিষয়ের ওপর।
এতক্ষণে নিশ্চয় মার্কেটিং ফানেল কি, কিভাবে কাজ করে, কিভাবে ব্যবহার করতে হয় বুঝাতে পেরেছি। তাই না?
যদি কোনো প্রশ্ন থাকে অথবা অতিরিক্ত কিছু এড করতে চান করতে পারেন।
- আতিকুর রহমান
(22.02.2024)
0 Comments
Post a Comment