‘ফানেল’ বিষয়টি দেখতে সাধারন হলেও বিজনেসের জন্য এটি প্রচন্ড ইফেক্টিভ। এটা এমনি এমনি বলছি না। 


শুরুতেই একটি সহজ উদাহরণ দেই। তাহলে বুঝতে আরো সুবিধা হবে। ধরুন, আপনার কাছে বিশাল একটি ট্যাংকার ভর্তি কেরোসিন রয়েছে। এগুলো দিয়ে একটি ইঞ্জিন চালাতে হবে। তাহলে প্রথমে ট্যাংকার থেকে সুবিধা অনুযায়ী ২ বা ৫ লিটার বোতলে নিতে হবে। তারপর ইঞ্জিনে ঢালতে হবে।


এখন বলুনতো, নিরাপদ ভাবে এই কাজটি কিভাবে করতে পারবেন? এজন্য কোন জিনিসটি দরকার হবে?


হ্যা, ঠিক ধরেছেন। একটি পারফেক্ট ফানেল লাগবে।


এবার অর্থটা একটু চেঞ্জ করে দেখুন। সেই বড় ট্যাংকারটি হচ্ছে কোটি কোটি জনগন বা Mass Audience. আর ইঞ্জিনটা হচ্ছে আপনার Business. 


অর্থাৎ, জ্বালানি তেল ছাড়া যেমন ইঞ্জিন চলবে না, তেমনি Customer ছাড়াও কোনো বিজনেস টিকতে পারবে না। তাই ইঞ্জিন (Business)-এ ফুয়েল (Customer) এর প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য একটি Funnel তো লাগবেই। তাই না?


(ফানেলই বিজনেসের একমাত্র বিষয় নয়। প্রোডাক্ট কোয়ালিটি, ব্র্যান্ড বিল্ডিং, কাস্টোমার সার্ভিস ইত্যাদি অসংখ্য বিষয় রয়েছে। সেগুলো নিয়ে অন্যদিন আলোচনা করা যাবে।)


যদি ফানেল ছাড়া কাজটি করতে চান তাহলে, ট্যাংকার থেকে ইঞ্জিনে তেল ঢালতে গেলে বেশিরভাগই বাইরে পড়বে। অল্প কিছু ইঞ্জিনে যাবে। এরকমই আপনার বিশাল টার্গেট অডিয়েন্সকে প্রোপার ফানেলে মাধ্যমে গাইড না করলে তারা আপনার কাস্টোমারে কনভার্ট হবে না।


আচ্ছা, একটি প্রোপার ফানেলের গুরুত্ব এতক্ষণে নিশ্চয় আমরা বুঝতে পেরেছি। এবার আপনার বিজনেসের জন্য যেই ফানেলটি সবচেয়ে ভালো ভাবে কাজ করবে সেটা সিলেক্ট করতে হবে। কয়েকটি বহুল ব্যবহৃত ফানেল হচ্ছে,


  • AIDA Model
  • Hourglass Funnel
  • TOF-MOF-BOF
  • ইত্যাদি


গত পোস্টে ৪ ধাপের AIDA Model নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। তাই আজকে আলোচনা করবো Hourglass Funnel নিয়ে। It is One of The Most Powerful Funnel!


কেন?


কারন Hourglass Funnel কাস্টোমারের পুরো জার্ণিটা ম্যাপ করতে পারে। একদম Awareness স্টেজ থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত আপনার Brand Advocate বানিয়ে দিবে।

সময় পরিমাপের Hourglass

Hourglass Funnel নামটি এসেছে সময় পরিমাপের Hourglass থেকে। এটি দেখতে উপরের ছবিটার মতো। এই ফানেলের ৮টি ধাপ রয়েছে। যথা,


  1. Awareness
  2. Engagement
  3. Subscription
  4. Purchase
  5. Excitement
  6. Expansion
  7. Retention
  8. Advocacy


নিশ্চয় একটু জটিল লাগছে। ওকে, একটা উদাহরণ দিয়ে সহজে তুলে ধরছি।


এখন বই মেলার সময় চলছে। তাই বই মেলা দিয়েই উদাহরণ দেয়ার চেষ্টা করি। তাহলে নিজের সাথে মিলাতে সুবিধা হবে।


১. Awareness


এখানে অডিয়েন্সদেরকে নিজের ব্র্যান্ড, প্রোডাক্ট, সার্ভিস সমন্ধে জানাতে হয়। 


আচ্ছা, আমরা কোনো নতুন বইয়ের কথা কিভাবে জানতে পারি? একটু মাথা ঠান্ডা করে ভাবুনতো। 


হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন। লেখকের ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে। হালের জনপ্রিয় লেখক যারা আছেন প্রায় সবাই ফেসবুকে বেশ এক্টিভ। 


উনারা নতুন বই নিয়ে কি প্ল্যান করছেন, কি বিষয়ে লিখছেন সেটার আপডেট দেন। অর্থাৎ, আমাদেরকে জানিয়ে দেন। মুনির হাসান স্যারের বই অনুযায়ী এই পদ্ধতিটি অনেক গ্রোথ হ্যাকিং এর মতো কাজ করে।


২. Engagement


কনটেন্টের সাথে অডিয়েন্সদের Engage করাতে হবে। অর্থাৎ, ফেসবুক পোস্টগুলোতে লাইক-কমেন্ট-শেয়ার করাকে বুঝায়।


লেখকরা তাদের বইয়ের ইন্টারেস্টিং অংশগুলো টুকরো আকারে পোস্ট করেন। ফিকশন লেখকরা লেখার শেষে এমন ভাবে টুইস্ট রাখেন যাতে পাঠকরা পরবর্তী অংশ পড়ার জন্য আগ্রহী হয়।


তেমনি নন-ফিকশন লেখকরাও আকর্ষণীয় বিষয়ে কোয়ালিটিফুল লেখা লিখতে পারলে পাঠকরা তাদের পোস্টে লাইক, কমেন্ট করেন। লেখকরাও পাঠকদের কমেন্টে রিপ্লাই দেন। ফলে উনাদের মধ্যে পার্সোনাল রিলেশনশিপ তৈরি হয়।


৩. Subscription


এই ধাপে অডিয়েন্স তার Contact info প্রতিষ্ঠানের সাথে শেয়ার করেন। অথবা, ছো্ট্ট কোনো অফারের বিনিময়ে তার Email, ফোন নাম্বার নেয়া হয়। এক্ষেত্রে ওয়েবিনার রেজিস্ট্রেশন, ফ্রি ই-বুক অফার, ফ্রি রিসোর্স অফার ইত্যাদি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়।


তারপর সেই Contact info দিয়ে অডিয়েন্সকে Email Marketing, SMS Marketing, Cold Calling ইত্যাদির মাধ্যমে রিচ আউট করা হয়। এটার আরেক নাম Permission Marketing. (শুনলাম চালডাল নাকি SMS আর কলের মাধ্যমে আপনাদের মাথা নষ্ট করে দিচ্ছে? সত্য নাকি?)


বইমেলা দিয়ে যেহেতু উদাহরন দিচ্ছি তাই এখানে Subscription কিভাবে কাজ করে সেটাও দেখতে হবে। এখানে ভালো কনটেন্ট দেয়ার মাধ্যমে এই স্টেপটি ব্যবহার করা হয়। 


অর্থাৎ, লেখক তার বই থেকে কিছু অংশ বা বই লেখার পেছনের কোনো গল্প / রহস্য ইত্যাদি ফেসবুকে শেয়ার করেন। ফলে পাঠকরা আগ্রহী হয়ে উঠে।


তারপর পাঠকরা লেখককে ফলো করতে শুরু করে। তারা পরবর্তী আপডেট বা পোস্টের অপেক্ষায় থাকে। এটাই হচ্ছে মোটামোটি কঠিন ধাপ। 


কারন মানুষ সহজেই কাউকে ফলো করতে বা Contact info দিতে চায় না। এজন্য প্রথমে তার বিশ্বাস, আস্থা অর্জন করতে হয়।


৪. Purchase


এবার সেই কাঙ্খিত মুহুর্ত। কাস্টোমারের কাছে প্রোডাক্ট বিক্রি করবো!


উঁহু। এতটা উতলা হওয়া যাবে না। কৌশলী হতে হবে। কারন সে আপনাকে বিশ্বাস করে, আপনার প্রোডাক্ট কোয়ালিটি খুব ভালো তবুও এটা ১০০% নিশ্চয়তা দেয়া যাবে না যে, পণ্যটি সে কিনবে। কারন সেলস সাইকোলজি, ইমোশন, প্রাইজিং, প্রেজেন্টেশন, তার আর্থিক অবস্থা আবেং আরও অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে।


তবে তাকে যথাযথ স্ট্র্যাটেজি এপ্লাই করে আগ্রহী করে তুলতে হবে। তাকে প্ররোচিত করতে হবে। কিন্তু কিভাবে করবেন? তাকে তো মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে হুমকি দেয়া যাবে না!!!


নিঞ্জা-টিপস: কিছুদিন ধরে এক পকেটমারের “স্মৃতিময় মোহাম্মদপুর” নামের একটি কাল্পনিক বই বিক্রির নিঞ্জা স্টাইলের গল্প ভাইরাল হয়েছে। এভাবে ট্রাই করা যায়, কি বলেন!!!


আচ্ছা, মূল কথায় আসি। যেকোনো প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কেনার জন্য কিছু অডিয়েন্স থাকবেই। তাদেরকে Warm Audience বলা হয়। 


মূলত ফানেল সবচেয়ে বেশি কাজে আসে বাকী Cold Audience দেরকে Warm Audience বানিয়ে তারপর Customer-এ কনভার্ট করার জন্য।


তাই এবার তাদের জন্য অফার দিতে হবে। অফারটি এমন ভাবে সাজাতে হবে যেন, অডিয়েন্স ভাবে সে অফারটি গ্রহণ না করলে কিছু একটা মিস করে ফেলবে। এটাকে বইয়ের ভাষায় FOMO (Fear of Mission Out) মেথড বলা হয়।


যেমন, প্রথম ১০০ জন প্রি-অর্ডারকারীর জন্য আরিফ আজাদের হাতে লেখা চিঠি উপহার, বুকমার্ক, স্টিকার, কোর্স, অটোগ্রাফ ইত্যাদি হচ্ছে প্রচলিত অফারগুলোর ভালো উদাহরণ। তাছাড়া মেলায় গেলে লেখকের সাথে সেলফি নেয়ার সুযোগটাতো আছেই।


আমার দেখামতে এবছর রম্য লেখক Sohail Rahman সেলফিটাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। তিনি পাঠকদের সাথে সেলফি তুলে চমৎকার সব মজাদার ক্যাপশন দিয়ে নিজের প্রোফাইলে আপলোড করেন। এভাবে পাঠকদের সাথে দারুণভাবে Engage হচ্ছেন। (আপনার মন খারাপ থাকলে উনার প্রোফাইলে ঢুঁ মেরে ক্যাপশনগুলো পড়ে আসতে পারেন!!!)


তাই Hourglass Funnel-এর প্রথম ৪টি ধাপ সঠিক ভাবে ফলো করতে পারলে অডিয়েন্সদের কাস্টোমারে কনভার্ট হবার চান্স অনেক বেড়ে যায়। 


এটি হচ্ছে এই ফানেলে প্রথম অংশ। বাকী অর্ধেক অংশটি সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং এবং Powerful. তবে আজকে লেখাটি অনেক বড় হয়ে যাওয়ায় বাকী ৪টি ধাপ পরবর্তী পর্বে লিখবো, ইনশাআল্লাহ।


- আতিকুর রহমান

(27.02.2024)