“মার্কেটিং” বিষয়টি আমার তুমুল আগ্রহের একটি বিষয়। যদিও ইন্ট্রোভার্ট হওয়ার কারনে এটা আমার সাথে খাপ খায় কি না এটা একটা কোটি টাকার প্রশ্ন! তবুও চেষ্টা করে দেখি কতটা স্যূট করে।

আজকে আলোচনা করবো মার্কেটিং এর বহুল চর্চিত বিষয় 4P নিয়ে।

ওহ হ্যাঁ, তার আগে দেখবো মার্কেটিং বলতে আমরা কি বুঝি?

মার্কেটিং হলো বিভিন্ন ধরনের স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করে কোনো ব্র্যান্ড, ব্যবসা, প্রোডাক্ট বা সার্ভিসকে জনসাধারনের কাছে প্রচার করে সেটার চাহিদা বৃদ্ধি করা।

সংজ্ঞাটি খুব কাঠখোট্টা হয়ে গেছে তাই না?

এক কথায় বললে, কোনো প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের প্রচার করাই হলো মার্কেটিং।

4P আবিষ্কারের গল্প

১৯৬০ সালে প্রফেসর Jerome McCarthy মার্কেটিং বিষয়ে একটি বই লেখার কাজে হাত দিয়েছিলেন। সে বছরই তার Basic Marketing: A Managerial Approach বইটি প্রকাশ করেন।

তিনিই পৃথিবীবাসীর সামনে প্রথমবারের মতো 4P কনসেপ্টটি তুলে ধরেন।

তারপর সময়ের ব্যবধানে এই কনসেপ্টের জনপ্রিয়তা হু হু করে বাড়তে থাকে। আজ ৬৪ বছর পর এসেও এটি ব্যাপক হারে ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও এর মধ্যে আরো ৩টি নতুন 'P' পালে জুটেছে। সে বিষয়ে অন্য পোস্টে আলোচনা করবো।

4P কি?

4P হলো একটি মার্কেটিং কনসেপ্ট যা যেকোনো মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজির মূল ৪টি বিষয়ের সংক্ষিপ্তরূপ। ৪টি বিষয় হলো,
  1. Product
  2. Price
  3. Place
  4. Promotion
অর্থাৎ, প্রথমে ভোক্তাদের জন্য একটি Product (Service-ও এর অন্তর্ভুক্ত) তৈরি করতে হবে। তারপর এটিকে মার্কেটে নিয়ে আসার জন্য সঠিক Price ঠিক করতে হবে। প্রোডাক্টটি যেন মানুষ সহজেই কিনতে পারে সেজন্য পারফেক্ট Place সিলেক্ট করতে হবে। এবং এটির প্রচারণা তথা Promotion করতে হবে।

আচ্ছা এবার বুঝার সুবিধার্থে 4P বিষয়টিকে ভেঙ্গে ফেলি। ওকে?

1. Product:

সারা দেশে “বিকাশ”-কে বয়কটের ট্রেন্ড চলছে। তো এই সময় আমি উদ্যোগ নিলাম বিকাশের মতো অন্য একটি প্লাটফর্ম আনবো। তাই “বিকল্প” নামক একটি MFS (Mobile Financial Service) প্রতিষ্ঠান চালু করলাম।

এটি হলো আমার Product তথা মানি ট্রান্সফার সার্ভিস। এটি হলো 4P এর প্রথম সেগমেন্ট। ব্যাস, আমার Product রেডি হয়ে গেলো।

2. Price:

“বিকল্প” নামক সার্ভিসটির একটি Price নির্ধারন করতে হবে। এজন্য মার্কেটে কে কে একই সার্ভিসটি বর্তমানে দিচ্ছে তাদেরকে এনালাইসিস করবো। যেমন, বিকাশ, রকেট, নগদ ইত্যাদি।

ক্যাশ আউটের জন্য বিকাশের খরচ ১৮.৫০ পয়সা, রকেটের এটিএম থেকে ৯টাকা, নগদ ১০ টাকা। এই টাকা থেকেই এজেন্টদের কমিশন, কোম্পানির খরচ সব উঠিয়ে আনতে হবে।

তাহলে এখন মার্কেট যাচাই করে দেখতে হবে কত টাকা চার্জ করলে “বিকল্প”-কে মানুষ গ্রহণ করবে এবং কোম্পানিও লাভবান হবে। ধরলাম ১২ টাকা।

3. Place:

উপরের দুটো সেগমেন্ট ঠিকঠাক ভাবে শেষ করতে পারলে এবার মার্কেটে লঞ্চ করার পালা। “বিকল্প” এর টার্গেট কাস্টমরারা কোথা থেকে বেশি লেনদেন করে সেটা খুঁজে বের করতে হবে।

বিভিন্ন রাস্তার মোড়, পাবলিক গ্যাদারিং হয় এমন এরিয়া হতে পারে আমার জন্য ভালো Place. তাছাড়া বর্তমানে যেহেতু বিকাশ, নগদ, রকেট তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে তাই বর্তমান এজেন্টরাই “বিকল্প”-এর এজেন্ট হিসেবে কাজ করবে।

কেন Place গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝার জন্য একবার ভাবুন যে, রাস্তার পাশের ২য় তলার কোনো দোকানে “বিকল্প” এর এজেন্ট বসলে কি জনগন সেখান থেকে লেনদেন করবে? অতি প্রয়োজন ছাড়া করবে বলেতো মনে হয় না।

একই কথা রেস্টুরেন্টের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। মানুষ রেস্টুরেন্টে যায় রিলাক্স হয়ে গল্প-গুজব করবে, আড্ডা দিবে, পাশাপাশি খাওয়া-দাওয়া করবে। এজন্য জনপ্রিয় রেস্টুরেন্টগুলো নীচ তলায় থাকে না। এখনতো Roof Top রেস্টুরেন্টগুলো বেশ জনপ্রিয়।

4. Promotion:

যেহেতু MFS সেক্টরে “বিকল্প” নতুন এসেছে তাই ধরলাম প্রাথমিক ভাবে জনগণ এটি খুবই কম ব্যবহার করবে। কারণ বেশিরভাগ মানুষ জানেই না।

তাই আমাকে এখন বিভিন্ন প্রমোশনাল ক্যাম্পেইন চালিয়ে মানুষকে জানাতে হবে। এজন্য বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজি নেওয়া যায়,
  • ক্যাশব্যাক অফার
  • ইনফ্লুয়েন্সারদের হায়ার করা
  • বিভিন্ন জনপ্রিয় অনুষ্ঠান স্পনসর করা
  • ইত্যাদি
অর্থাৎ, জনগণের কাছে যেভাবেই হোক পৌঁছাতে হবে। আর সেটা যদি হয় প্রোপার স্ট্র্যাটেজি ফলো করে তাহলে আশানুরূপ রেজাল্ট পাওয়া যাবে।

লেখাটা অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। তাই আজকে আর বড় করছি না। আশাকরি পরবর্তীতে আরো লিখবো। Happy Learning.


- আতিকুর রহমান

(২৭ জানুয়ারী, ২০২৪)