বাসে, ট্রেনে ও অন্যান্য জায়গায় ভ্রমণের সময় পাশের সিটের মানুষদের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলে বেশ অবাক হয়েছিলাম। কেউ কেউ বিষয়টি এক্বেবারেই জানেন না। আর কেউ জেনেও চুপ আছেন। কিন্তু নিজের পরিবার এবং ভবিষ্যত প্রজন্ম নিয়ে ঠিকই টেনশন করছেন। 

এবার অনুমান করুন তো কি বিষয়ে কথা বলেছি? আচ্ছা আমিই বলছি। ট্রান্সজেন্ডার!


পরীক্ষার জন্য গত কয়েকদিন ঢাকায় থাকতে হয়েছিল। তাই যাতায়াতের সময় জ্যামে বসে বসে বিভিন্ন বয়সের ও পেশার অন্তত ১০ জন মানুষের সাথে এব্যাপারে কথা হয়েছে। 


হাইস্কুলের পাঠ্যবইয়ে শরী*ফ-শরী*ফা এর গল্প থেকে শুরু করে এপর্যন্ত চলমান সমস্ত ঘটনা একই লাইনে চলছে। আর দেশের পত্রিকাগুলোও এই বিকৃতিকে সমানতালে সাপোর্ট দিচ্ছে।


পুরো গেমটি চলছে ‘হিজড়া’ জনগোষ্ঠীর কাঁধে ভর করে। তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে ট্রা*ন্স*জে*ন্ডা*রকে বৈধ করার অপচেষ্টা চলছে।


অর্থাৎ, তারা নিজের বিকৃত ইচ্ছা পূরণে “নারী থেকে পুরুষ” কিংবা “পুরুষ থেকে নারী” হওয়ার অধিকার চাচ্ছে।


এতটুকু জানার পর অনেকেই মনে করেন এটা কাল্পনিক কথা বার্তা। কারন ছেলে থেকে মেয়ে অথবা মেয়ে থেকে ছেলে হওয়া যায় না এটা একটা কমনসেন্স।


হ্যাঁ, ব্যাপারটি সম্পূর্ণ বিকৃত মানসিকতা থেকে এসেছে সন্দেহ নেই। তাছাড়া এটি যে কতবড় সমস্যা তা হয়তো অনেকে অনুমানও করতে পারছেন না।


কিরকম সমস্যা? একটু খুলে বলি তাহলে।


১. একজন মানুষ চাইলেই সে লিঙ্গ পরিবর্তন করতে পারবে। এমনকি জেন্ডার পরিবর্তন করতে হলে কোনো অপারেশন করা বাধ্যতামূলক নয়। শুধু মুখে বলবেন যে আমি “কুলসুম বেগম” থেকে এখন “কালাম মিয়া” হয়ে গেছি। 


এতটুকুই যথেষ্ট। 


এখন থেকে আপনাকে পুরুষ হিসেবেই স্বীকৃতি দিতে হবে। আপনি পুরুষদের মতো উত্তরাধীকার পাবেন, পুরুষ ওয়াশরুম ব্যবহার করতে পারবেন, পুরুষ কোটা যদি কোথাও থেকে থাকে সেখানে জয়েন করতে পারবেন যাবতীয় সবকিছুই করতে পারবেন।


আবার একই ভাবে “কালাম মিয়া” যদি মুখে বলে সে “কুলসুম বেগম” হয়ে গেছে তাহলে এখন থেকে সে নারী। সে নারী কোটায় চাকরি পাবে, নারীদের ওয়াশরুম ব্যবহার করবে পারবে সব কিছু।


অর্থাৎ, কতটা মানসিক বিকৃতি ও সামাজিক বিপর্যয় ঘটবে ভাবতে পারছেন? আমাদের মা-বোনদের প্রাইভেসী, নিরপত্তা কোথায় যাবে চিন্তা করেছেন? 


২. অলরেডি কিছু ছেলে শাড়ি, টিপ পড়ে নিজেকে মেয়ে সাজিয়ে চলাফেড়া করছে। তারা নিজেকে মেয়ে মনে করে। আর সেদিন দেখলাম বোরকা পড়া এক মহিলার ছবি, অথচ বোরকার ভেতরে সে জলজ্যান্ত ছেলে। সে নাকি নিজেকে মনে মনে মেয়ে মনে করে। হাউ ফানি!!!


৩. জলজ্যান্ত মেয়েরা এসে ছেলেদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (নটরডেম, ঢাকা কলেজ ইত্যাদি) ভর্তি হবে। আর পুরোদস্তুর ছেলেরা মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে (ভিকারুননিসা, ইডেন ইত্যাদি) ভর্তি হবে। 


৪. একজন মেয়ে সে বাবার বাড়ি থেকে ভাইদের সমান সম্পত্তি নিবে। আবার স্বামীর কাছ থেকেও স্ত্রী হিসেবে নিবে। কারন জেন্ডার চেঞ্জ করাতো শুধু মুখে বললেই হবে।


৫. সম*কামীতা স্বীকৃতি পাবে।


এখন হয়তো ভাবতে পারেন যে, আমাদের দেশের মতো কনজারভেটিভ সমাজে এসব আজগুবী ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নাই। হ্যাঁ, এটা কিছুটা সত্য। কিন্তু একটা প্রচলিত কথা আছে যে, “ফ্রি পাইলে বাঙ্গালী আলকাতরাও লয়”।


চরম বেকাত্বের এই সময়ে কিছু ছেলে অবশ্যই মেয়ে দাবী করে মেয়েদের সুযোগগুলোতে ঢুকার চেষ্টা করবে। আর মেয়েরাও ছেলে দাবী করে উত্তরাধীকার সম্পত্তি ও ছেলেদের সুযোগগুলো নেয়ার চেষ্টা করবে।


এখন বলতে পারেন যে, বাংলাদেশেতো এসব আইনত বৈধই না। তাহলে কিভাবে সম্ভব এসব?


হ্যাঁ, এখানেই সবচেয়ে খারাপ খবর। গত ৩১ই মার্চ, ২০২৩ এর বাংলা ট্রিবিউনের “খসড়াতেই আটকে আছে ট্রান্সজেন্ডার আইন” শিরোনামের নিউজটি দেখতে পারেন। এই আইনের খসড়া প্রস্তুত হয়ে গেছে। শুধু সংসদে পাস করা বাকী।


পত্রিকাগুলোও হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার দুটি বিষয়কে শব্দের মারপ্যাঁচ দিয়ে এই বিপদজনক আইনকে পাস করতে সহায়তা করছে। হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার এর শব্দের মারপ্যাঁচ নিয়ে ড. সারোয়ার স্যারের লেখাটি পড়তে পারেন। কমেন্টে লিংক দিলাম।


তাছাড়া পাকিস্তানেও এই আইনকে শব্দের মারপ্যাঁচ দিয়ে পাস করিয়ে নিয়েছিল। তারপর সেখানে ছেলে-মেয়ে উত্তরাধীকার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে চরম বিশৃঙ্খলা হয়েছিল। তাই কর্তৃপক্ষ তাদের ভুল বুঝতে পেরে ২০২২ সালের দিকে পাকিস্তান সেই আইনকে বাতিল করে


আর তারা প্রায় সব জায়গাতেই টার্গেট করে ছোট শিশুদেরকে। তারপর তাদের পাঠ্যক্রম এবং আনুসঙ্গীক বিষয়গুলোর মাধ্যমে একটা প্রজন্মকেই তাদের মতো করে গড়ে তোলে। 


আপাতত আশার বাণী হলো, ড. সারোয়ার স্যার, আসিফ আদনান ভাই, শামসুল আরেফীন শক্তি ভাই উনারা মানুষদেরকে সচেতন করে চলেছেন। সেই সাথে আলেমগণ এই বিকৃত মতবাদটি নিয়ে সোচ্চার হচ্ছেন। গতকাল দেখলাম হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে মুফতী হারুন ইযহার হাফি. আলেমদের একটি দল নিয়ে নতুন শিক্ষামন্ত্রীর সাথে এ ব্যাপারে বৈঠক করেছেন। 


সম্ভবত এতে কাজ হবে না। তবে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে এটি প্রথম ধাপ ছিলো। আমাদেরকেও এই ব্যাপারে সরব হতে হবে। 


কারন এখন আমরা যদি সরব না হই তাহলে এই বিকৃতি আমাদের প্রত্যেকের পরিবারেও এসে ঢুকবে। হয়তো সেই দিন খুব বেশি দেরী নয় যেদিন আমাদের ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন আমাদের সামনে এসে বলবে সে আজকে থেকে বিপরীত লিঙ্গের হয়ে গেছে। তখন মেনে নিতে পারবো তো?


- আতিকুর রহমান

(২১-০১-২০২৪)

১.