গতপর্বে আলোচনা করেছিলাম মার্কেটিং এর 4P নিয়ে। আজকে আলোচনা করবো 7P নিয়ে।

একটি প্রোডাক্টকে সঠিক ভাবে মার্কেটিং করার জন্য নিত্যনতুন ধারনা আবিষ্কার হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় 4P থেকে বেড়ে 7P, তারপর 9P পর্যন্ত গিয়েছে।

এখন আপনার সাদা মনে প্যাঁচালো প্রশ্ন আসতে পারে, এটা বাড়ছে কেন? এটার সহজ উত্তর হলো, আবিষ্কারকদের খেয়ে-দেয়ে কাজ নেই। তাই বসে বসে এসব আবিষ্কার করছে!!!

এই ধরুন, নিউটন সাহেবের হাতে ভালো কাজ থাকলে কি আর আপেল গাছের নীচে বসার সময় পেতেন? তাহলে আপেলও আর উনার মাথায় পড়তো না। অভিকর্ষ বলেও কিছু আবিষ্কার হতো না। অতএব, ডানপক্ষ = বামপক্ষ। প্রমাণিত!!!

এবার আসি আসল কথায়। সময়ের সাথে সাথে পরিবেশ, অর্থনীতি, মানুষের আচরণ, সংস্কৃতি, অর্থ ব্যবস্থা সবকিছুই পরিবর্তন হচ্ছে। তাই পরিবর্তনের সাথে সমন্বয় করেই নতুন নতুন ফ্যাক্টর, আইডিয়া, মেথড সবকিছু মার্কেটিং এর সাথে যোগ হচ্ছে।

প্রথমদিকে যখন 4P চালু করা হয়, তখন শুধু প্রোডাক্ট মার্কেটিংকে ফোকাস করা হয়েছিল। তারপর সার্ভিস মার্কেটিং জনপ্রিয় হতে থাকে। তাই তখন Booms and Pitner অতিরিক্ত ৩টি P যোগ করেন। তখন এটি 7P নামে পরিচিতি লাভ করে।

এবার চলুন একনজরে ৭টি P দেখে আসি। তাহলে বুঝতে সহজ হবে।

  1. Product
  2. Price
  3. Place
  4. Promotion
  5. People
  6. Process
  7. Physical Evidence

এখান থেকে প্রথম ৪টি P নিয়ে আগের পর্বে আলোচনা করেছি। সেখানে bKash এর পরিবর্তে “বিকল্প” নামক প্রতিষ্ঠানকে উদাহরণ হিসেবে এনেছিলাম। আজকে উদাহরণ দিবো AtiCash (অ্যাটিক্যাশ) প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে। এর মাধ্যমেই আজকে বাকী ৩টি P নিয়ে সংক্ষেপে ধারণা নিবো। ঠিক আছে?

৫. People

আমাদের AtiCash প্রতিষ্ঠানটির Product, Price, Place, Promotion ৪টি কাজই করা হয়েছে। এখন দেখতে হবে, এই প্রতিষ্ঠানের যেসব মানুষ সরাসরি গ্রাহকদের সংস্পর্শে আসে তারা কি ভালো ভাবে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কি না। নাহলে গ্রাহকদের কাছে একটা খারাপ ইমপ্রেশন তৈরি হবে।

যেসব দোকানে আপনি কেনাকাটা করতে গিয়ে দেখেন দোকানদার ভালো আচরণ করছে না, সেগুলোতে কি পরবর্তীতে আবার যান? নিশ্চয় বেশি প্রয়োজন না হলে যান না। তাই আমাদের AtiCash এর কর্মীদেরকে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে।

এটা People সেগমেন্টের কাজ। এটা আবার কোম্পানির মানব-সম্পদ (HR) বিভাগের দায়িত্বও বটে।

৬. Process

একটা বিজনেসের যাবতীয় কার্যক্রম একটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে হতে হয়। অগোছালো হলে সেটা মেইনটেইন করা, কোয়ালিটি ঠিক রাখা, স্কেল আপ করা এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। যা বিজনেসের রেপুটেশন নষ্ট করে।

যেমন, গত ২ বছর আগে নগদের মাধ্যমে প্রাইমারী স্কুলের উপবৃত্তি দেওয়ার পর গ্রাহকেরা প্রচুর পরিমাণে হয়রাণির শিকার হয়েছিলেন। বিশেষ করে PIN Number নিয়ে। তাদের কাস্টোমার সাপোর্টও সেভাবে পাওয়া যাচ্ছিল না।

অথচ তাদের উচিত ছিলো, এতবড় একটা প্রজেক্ট হাতে নেয়ার আগে সেটার জন্য ভালো প্রস্তুতি নেয়া। এসবের অভাবে মানুষের মধ্যে (বিশেষ করে নতুন গ্রাহকদের) একটি খারাপ ইমেজ তৈরি হয়েছে নগদের প্রতি।

তাই বিজনেসের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নিয়ে যেন গ্রাহকদের অসন্তুষ্টি তৈরি না হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে। একটা কথা আছে এরকম যে, “কাস্টমার প্রোডাক্ট ক্রয় করে না, সে এক্সপেরিয়েন্স ক্রয় করে”। তাই সে যেন স্মুথলী সবকিছু করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।

৭. Physical Evidence

একজন কাস্টমার যখন নতুন জায়গা থেকে কোনো ফিজিক্যাল বা ডিজিটাল প্রোডাক্ট কিনতে যায় তখন সে অনিশ্চয়তা ভোগে। এটা কি রিয়েল নাকি ফ্রড? প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কি ভালো হবে নাকি বাজে সার্ভিস? ইত্যাদি ইত্যাদি...।

এই ধরনের অনিশ্চয়তায় আমরাও ভুগি। তাই না?

আচ্ছা, বলুনতো আমরা এই অনিশ্চয়তা কিভাবে কাটিয়ে উঠি?

হ্যাঁ, প্রতিষ্ঠানের একটি সুন্দর-সুসজ্জিত অফিস, তাদের প্রফেশনাল ওয়েবসাইট, ল্যান্ডিং পেইজ এগুলো দেখে আমরা ভরসা পাই। এটি ঐ প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের জন্য Physical Evidence হিসেবে কাজ করে।

যেমন, রবি, গ্রামীনফোন এদের কাস্টমার কেয়ার অফিসে গেলে Awesome Feeling পাবেন। সুন্দর ভাবে সাজানো-গোছানো অফিস, প্রশিক্ষিত স্টাফ, তাদের ব্যবহার ইত্যাদি দেখে মানুষ ইমপ্রেস হয়ে যায়।

আশাকরি Marketing Mix এর ৭টি P বিস্তারিত উদাহরণসহ তুলে ধরতে পেরেছি। যদিও আরো ২টি P আছে। কিন্তু সেই দুটি P নিয়ে আমিও এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। একেক সাইটে একেকটা ফুল মিনিং বলা আছে। তাই আপাতত ৭টাই থাকুক।

ওহ আচ্ছা, bKash-এর বিকল্প হিসেবে আনা আমাদের AtiCash এর জন্যও চমৎকার একটি অফিস প্রয়োজন😅!!! তাই না?

- আতিকুর রহমান

(ফেব্রুয়ারী ০৩, ২০২৪)