দেখতে দেখতে ৮ম ক্লাসে চলে আসলাম। হৃদয় ভাই এই ক্লাসে এটি সহজ ও সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তাই আজকে On Page SEO এর তত্ত্বীয় বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
গত পোস্টে একটি বিশাল লাইব্রেরীর গল্পের মাধ্যমে গুগল সমন্ধে জেনেছিলাম। আপনাদের মনে আছে তো? সেটি না পড়ে থাকলে আগে সেটি পড়ে আসুন। নাহলে এই পোস্ট বুঝতে একটু কঠিন লাগবে।
তাহলে শুরু করা যাক।
আমরা যে এসইও শিখছি সেটা কোথায় কাজে লাগাব? অবশ্যই কোনো একটি ওয়েবসাইটে।
আর প্রত্যেক ওয়েবসাইট মালিকের লক্ষ্য থাকে গুগলের ১ম পেজের ১ম স্থানে রেংক করা। এবং আমাদের লক্ষ্যও সেটাই। কারন ক্লায়েন্ট আমাদেরকে এই কাজের জন্যই হায়ার করবে। তাহলে এই লক্ষ্য অর্জনে কি করতে হবে?
অনেকে অনেক কিছু বলতে পারেন। আসলে ১ম স্থানে যেতে হলে মাত্র ১টি কাজ করলেই হবে! কি সেটা?
যারা প্রথমে আছে তাদেরকে পেছনে ফেলা! কি মনে হচ্ছে খুব সহজ! তাই না?
উত্তর হলো হ্যাঁ এবং না দুটোই।
যদি পুরো বিষয়টা আয়ত্ব করতে পারেন তবে সহজ। না হলে খুব কঠিন। আমরা যেহেতু সহজের দলে থাকতে চাই তাই পুরো অন পেজ এসইও সমন্ধে আজকে মনযোগ দিয়ে শিখব। দেখি এর ভেতরে কি এমন আছে?
ধরুন, ক্লায়েন্ট একজন Wedding Photographer. তার কাজ/ব্যবসাকে আরো বড় করার জন্য একটা ওয়েবসাইট খুলল। তার টার্গেট কেউ Wedding Photographer খুঁজলে যেন তাকে সবার আগে পায়। তাই আমাকে হায়ার করলো।
এখন আমি গুগলে গিয়ে দেখলাম Wedding Photographer লিখে সার্চ দিলে অন্য অনেকগুলো ওয়েবসাইট রেংক করে বসে আছে। এখন আমি যেহেতু টপে থাকতে চাই তাই অন্য সবাইকে হারিয়ে আমাকে সেখানে যেতে হবে।
আমার টার্গেট Wedding Photographer লিখে কেউ সার্চ দিলে প্রথম ৩টি রেজাল্টের একটি যেন আমার ক্লায়েন্টের ওয়েবসাইট হয়।
এক্ষেত্রে অন পেইজ এসইও ৬০% এর মতো কাজে লাগবে। আর বাকীগুলো এসইও-এর অন্যান্য ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করবে।
অন পেইজ এসইও করার জন্য যা যা করতে হবে:
গতপোস্টে আমরা দেখেছিলাম যে, অন পেইজ এসইও করতে হলে প্রথমে তিনটি বিষয়য়ে সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হয়।
- URL-এ কিওয়ার্ড রাখা
- Title-এ কিওয়ার্ড রাখা
- Meta-Description-এ কিওয়ার্ড রাখা
তাই প্রথমে এগুলো দিয়ে অন পেইজ এসইও করা শুরু করব।
১. URL-এ কিওয়ার্ড রাখা
গুগলের ক্রলার ওয়েবসাইট ক্রল করার সময় URL সর্বপ্রথমে দেখে। তাই এখানে কিওয়ার্ডটি ব্যবহার করতে হবে। যেমন,
websitedotcom/wedding-photographer
এখানে একটা বিষয় খেয়াল করবেন কিওয়ার্ডের মধ্যে স্পেস থাকলে সেখানে হাইফেন(-) ব্যবহার করতে হবে।
২. কিওয়ার্ড দিয়ে আকর্ষণীয় Title তৈরি
আমাদের কিওয়ার্ড ছিল Wedding Photographer. তাহলে এটি দিয়ে একটি ভালো এবং আকর্ষণীয় টাইটেল তৈরি করব। যেমন,
- Best Wedding Photographer in Dhaka অথবা,
- Best Wedding Photographer in 2023
অর্থাৎ, টাইটেলে আমাদের টার্গেটেড কিওয়ার্ড থাকতেই হবে। তাছাড়া টাইটেল পড়েই একজন ভিজিটর সিদ্ধান্ত নেয় এই সাইটে ক্লিক করবে কি করবে না। তাই সময় নিয়ে সাবধানে টাইটেল তৈরি করুন।
Tips: টাইটেলে সবসময় Best, Excellent, সালের নাম, এবং এমন ধরনে modifier জাতীয় শব্দ ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন।
৩. Content-এ কিওয়ার্ডের সঠিক ব্যবহার
Content is King. এটা আমরা সবাই জানি। শুধু জানলেই কি হবে? রাজাকে রাজার মতো সম্মান জানাতে হবে না?
হ্যাঁ। এজন্যই সবসময় হাই কোয়ালিটি আর্টিকেল / কনটেন্ট ব্যবহার করবেন।
কনটেন্টের মান যদি খারাপ হয় তাহলে এসইও করেও লাভ হবে না। কারন দিন শেষে এই কনটেন্টটা একজন মানুষই দেখবে। এবং তার ভালো-খারাপ বুঝার মতো রুচি আছে।
শুধু মানুষ বুঝলেই হবে না। গুগলকেও বুঝতে হবে যে আপনার কনটেন্টটি খুবই ভালো। এজন্য খেয়াল রাখবেন কনটেন্ট যেন,
- informative হয়
- copy-paste না হয়
- unique হয় এবং
- plagarism free হয়
সেই সাথে এখন নিশ্চয় প্রশ্ন জাগছে, কত শব্দের কন্টেন্ট লিখতে হবে? চলুন এটাও জেনে আসি?
আমরা প্রথমে দেখব বর্তমানে রেংক করা ১ম তিনটি ওয়েবসাইট কত শব্দের কন্টেন্ট ব্যবহার করেছে। তারপর তাদের থেকে বেশি শব্দের কনটেন্ট ব্যবহার করব।
৪. Heading Tag এর ব্যবহার
ইন্টারমিডিয়েটে ICT বইয়ের HTML অধ্যায় পড়ার সময় H1 থেকে H6 পর্যন্ত tag পড়ে এসেছেন নিশ্চয়। এগুলোও সেই হেডিং ট্যাগই। আপনার কষ্ট করে এসব ট্যাগ পড়া বৃথা যায়নি! আজকে কাজে লেগে গেল!
এখানে টার্গেট কিওয়ার্ড এবং এর সাথে রিলেভেন্ট কিওয়ার্ডগুলো ব্যবহার করবেন। যেমন, আমার টার্গেট কিওয়ার্ড Wedding Photographer.
এবং এর সাথে রিলেভেন্ট কিওয়ার্ড হতে পারে Wedding Photography, Wedding Videography, Pre Wedding Photography ইত্যাদি।
৫. Image and img-alt text
এখানের মূল বিষয় হলো আপনি ঠিক কয়টি ইমেজ ব্যবহার করবেন। এক্ষেত্রেও কনটেন্টের ওয়ার্ড এর মতো প্রসেস ফলো করবেন। মানে আগে দেখবেন প্রথম ৩জন কয়টি ইমেজ ব্যবহার করেছে। তারপর যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছে তার থেকে বেশি ইমেজ ব্যবহার করবেন।
তাহলে প্রশ্ন আসে img-alt text কি?
এটি হলো আপনি যখন অনলাইনে থাকেন এবং ইন্টারনেট স্পীড কম থাকে তখন যদি ছবি লোড না হয় সেই মুহুর্তে দেখবেন সেই ছবিটা সম্পর্কে একটা লেখা দেখা যায়। তাই না? খেয়াল করেছেন কখনো?
এটাই img-alt text. যখন ওয়েবসাইটে ইমেজ আপলোড করবেন তখন একটা বক্স পাওয়া যায় img-alt text লিখে দেয়ার জন্য। সেখানে সুন্দর ভাবে টার্গেটেড কিওয়ার্ডটা বসিয়ে দিবেন।
৬. Keyword Percentage
আপনি যদি ১০০০ ওয়ার্ডের কনটেন্ট ব্যবহার করেন তাহলে হৃদয় ভাইয়ের পরামর্শ হলো ৫বার আপনার টার্গেটেড কিওয়ার্ডটা ব্যবহার করবেন। অনেক বেশি ব্যবহার করলে গুগল বুঝবে যে আপনি গুগলকে জোড় করতেছেন। তাই সে তখন এই কনটেন্টকে রেংক দিবে না।
অর্থাৎ, পানিতে নেমে কুমিরের সাথে লাগতে যাবে না। তাই টার্গেটেড কিওয়ার্ডের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে সতর্ক থাকবেন।
৭. Content Update
আমরা সবাই আপডেটেড জিনিস পছন্দ করি। যেমন, আপনাকে আইফোন কিনার সুযোগ দিলে আপনি iPhone 6 না কিনে নিশ্চয় iPhone 14 Pro Max বা আরো আপডেটেডটা কিনবেন।
একই বিষয় কনটেন্টের ক্ষেত্রেও। এখানে প্রতি ৬ মাস পরপর প্রয়োজনীয় ডাটাগুলো আপডেট করতে হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৮. Keyword Cannibalization
পুরুষ বাঘ/সিংহ ঠিক মনে করতে পারছি না এরা ক্ষুধা লাগলে নিজের সন্তানকেও খেয়ে ফেলে। অর্থাৎ, নিজ প্রজাতির গোশত খায়। এই ঘটনাকে বলে Cannibalization.
অর্থাৎ, Keyword Cannibalization হলো আপনি যদি একই কিওয়ার্ড টার্গেট করে একটি ওয়েবসাইটে একটার বেশি কনটেন্ট পাবলিশ করেন তবে গুগল কনফিউজ হয়ে যায় যে, কোনটাকে রেংক দিবে। তারপর শেষ পর্যন্ত একটাও রেংক পায় না। অর্থাৎ, নিজেই নিজের ক্ষতি করে।
এজন্য একই কিওয়ার্ড টার্গেট করে নতুন কনটেন্ট দিতে চাইলে আগেরটাকে আপডেট করে দেবেন অথবা আগেরটা মুছে তারপর নতুনটা পাবলিশ করবেন।
তাহলে On Page SEO সমন্ধে কিরকম ধারনা পেলেন? প্রয়োজনে আবার পড়তে পারেন। তাহলে পুরো বিষয়টা ক্লিয়ার হবে আশাকরি।
অল্প অল্প করে বিশাল আলোচনা হয়ে গেল। তাহলে আজকের মতো এখানেই থাকুক। নেক্সট ক্লাস নিয়ে লেখার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।

0 Comments
Post a Comment