বোন কন্ডাকশন হেডফোন বিএ০৯ ব্যবহার করছেন একজন ব্যক্তি

বোন কন্ডাকশন হেডফোন বিএল০৯ নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই। বোন কন্ডাকশন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হওয়ায় হেডফোনটির প্রচুর চাহিদাও রয়েছে। কানের সুরক্ষার জন্য এটি অনেক ভালো হেডফোন। 

তাই আপনাদের মনের অনেক জানা-অজানা বিষয়ে নিয়ে আজকের আয়োজন বোন কন্ডাকশন হেডফোন বিএল০৯ রিভিউ। আজকের আর্টিকেলে তুলে ধরব, বোন কন্ডাকশন কি, এর ইতিহাস, বোন কন্ডাকশন হেডফোন এবং এর সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

জগিং, সাইক্লিং বা অবসর সময় কাটাতে সঙ্গীত মানুষের নিত্যসঙ্গী। সাথে হেডফোন ব্যবহার করলেতো সোনায় সোহাগা। কোলাহলময় পরিবেশ থেকে সাময়িক বিরতি নিয়ে সঙ্গীতের রাজ্যে অবাধ বিচরণ করা যায়।

হেডফোনের ব্যবহার শুধু অবসরেই সীমাবদ্ধ নয়। গাড়ি চালানো, ফুটপাথ দিয়ে হাঁটার সময় এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাতেও ব্যবহার করা হয়। এতে আশেপাশের কোনো শব্দ কানে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে যেকোনো মুহুর্তে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

এসব সমস্যা সমাধানের জন্য গবেষকরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বছরের পর বছর। তাদের পরিশ্রমে আবিষ্কৃত হয়েছে বোন কন্ডাকশন হেডফোন। এই হেডফোনটি কান খোলা রেখেই বাহির থেকে মাথার খুলির হাড়ে কম্পন সৃষ্টি করে শব্দ প্রবাহিত করে। ফলে বাহিরের শব্দও সমানভাবে শোনা যায়।

ফোর্বস এর মতে, যারা কানে কম শোনে বা কানকে সুরক্ষা দিতে চায় তাদের জন্য বোন কন্ডাকশন হেডফোন খুবই উপযোগী।

এবার চলুন জেনে নিই বোন কন্ডাকশন কি? এর ইতিহাস, বোন কন্ডাকশন টেকনোলজি কিভাবে কাজ করে এবং এর সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ।


বোন কন্ডাকশন কি?

উইকিপিডিয়ার মতে, বোন কন্ডাকশন হলো, শ্রোতার কানের ছিদ্রকে বন্ধ না করেই মাথার খুলির হাড় দিয়ে শব্দকে কানের ভেতরের অংশে পরিবাহিত করা। শব্দ তরঙ্গ হাড়কে(খুলির) ভাইব্রেট করে ধারাবাহিকভাবে এই ট্রান্সমিশন ঘটিয়ে থাকে। হাড় সাধারনত বেশি ফ্রিকোয়েন্সির শব্দের তুলনায় কম ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ ভালোভাবে পরিবহন করতে পারে।


একনজরে ইতিহাস:

১৫শ শতাব্দীতে সর্বপ্রথম বোন কন্ডাকশান হেয়ারিং এইডস সিস্টেম আবিষ্কৃত হয়।

ইটালিয়ান শল্য চিকিৎসক গিরোলামো কারদানো উপলব্ধি করেন যে, একটি রডের একপ্রান্ত কোনো ব্যক্তির দুই সারি দাঁতের মাঝখানে চেপে ধরে অপর প্রান্ত কোনো বাদ্যযন্ত্রের সাথে সংযুক্ত করলে সেই ব্যাক্তিটি বাজনা শুনতে পাবে। এমনকি সে যদি বধিরও হয়!

বিশ্বখ্যাত সুর স্রষ্টা বেথোফেনের শেষ জীবনে শ্রবণশক্তি কমে যাওয়ায় তার জন্য এই পদ্ধতিটি ব্যবহৃত হয়েছিল।

    Related: Realme Narzo 50A Prime মোবাইল রিভিউ

১৮২০ সালে ফ্রেঞ্চ শল্যচিকিৎসক জিন মার্ক গ্যাসপার্ড ইটার্ড এই ডিভাইসটির অনেক উন্নতি সাধন করেন। রডের বাদ্যযন্ত্রের সাথে লাগানো অংশটিকে অন্য একজন মানুষের মুখের সাথে স্থাপন করে পরীক্ষা চালিয়ে সফলতা পান। এই আবিষ্কারটি “রড অব ইটার্ড” নামে পরিচিতি পায়।

তারপর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা শেষে ১৯৭৭ সালে Bone-Anchored Hearing Aid (BAHA) তৈরি করা হয়। ২০১২ সালে একই আইডিয়াকে আরো এগিয়ে নিয়ে তৈরি হয় BoneBridge ডিভাইস। গবেষকদের হাত ধরে বোন কন্ডাকশান প্রক্রিয়া প্রতিনিয়ত উন্নত হচ্ছে।


বোন কন্ডাকশন টেকনোলজি:

বিভিন্ন প্রকারের বোন কন্ডাকশন প্রযুক্তির শ্রবণ যন্ত্র রয়েছে। এগুলো মোটামুটি একই নীতির ওপর ভিত্তি করে কাজ করে। এই প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত উপাদানগুলো হচ্ছে,

  • মাইক্রোফোন
  • সিগনাল প্রসেসিং
  • এনার্জি সাপ্লাই এবং 
  • ট্রান্সডিউসার

মাইক্রোফোন শব্দকে গ্রহন করার পর প্রসেসিং হয়ে ট্রান্সডিউসারে প্রেরিত হয়। তখন এটি খুলির হাড়ের মধ্যে একধরনের কম্পন সৃষ্টি করে। ফলে সেই কম্পনের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে শব্দ শোনা যায়। এভাবেই বোন কন্ডাকশন টেকনোলজি কাজ করে।


বোন কন্ডাকশন হেডফোন বিএল০৯:

বোন কন্ডাকশন টেকনোলজি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে বোন কন্ডাকশন হেডফোন বিএল০৯ মডেলটি। এতে ওয়ারলেস কানেকশন তৈরির জন্য ব্লুটুথ-কম্পিটিবল ভি৫.০ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এটি স্টেবল ও ক্লিয়ার সাউন্ড দিতে সক্ষম।

এর মাধ্যমে ফোন কল, মিউজিক প্লে করা যায়। তাই ড্রাইভিং, সাইক্লিং ইত্যাদি নির্বিঘ্নে করা যায়।

বারবার ডিভাইসে কানেক্ট করার ঝামেলা একেবারেই নেই। শুধু সময়মতো ব্যাটারি রিচার্জ করে নিতে হবে।


বোন কন্ডাকশন হেডফোন বিএল০৯ এর ছবি
বোন কন্ডাকশন হেডফোন বিএল০৯

নীচে এই হেডফোনের কিছু সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ জেনে আসি চলুন।


বোন কন্ডাকশন হেডফোন বিএল০৯ এর সুবিধা:

১. কানকে ইনফেকশন ও ময়লা থেকে মুক্ত রাখে।

সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো কানের ভেতরে কোনো কিছু লাগাতে হবে না। তাই ইনফেকশন বা কানে ময়লা জমার ঝুঁকি নেই। যারা কানের ইনফেকশনের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য একটি বাড়তি সুবিধা।

২. চারপাশের শব্দ শোনা যায়।

গাড়ি চালানোর সময় বা রাস্তায় হাঁটার সময় যেকোনো শব্দ শুনতে হয়। যাতে দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। সাইক্লিস্ট ও রানারদেরও তাদের কাজের সময় সতর্ক থাকতে হয়।

প্রচলিত হেডফোনগুলো ব্যবহার করলে আশেপাশের শব্দ কানে আসে না। এতে গুরুত্বপূর্ণ শব্দ মিস করতে পারেন। বোন কন্ডাকশন হেডফোন ব্যবহার করলে এই সমস্যার চমৎকার সমাধান হয়ে যায়।

৩. বধিরদেরকে শুনতে সাহায্য করে।

বোন কন্ডাকশন হেডফোন সবচেয়ে উপকার করেছে বধির / শ্রবণ শক্তিহীনদেরকে। তারা কানের সমস্যার কারনে শব্দ শুনতে পায় না। কিন্তু এই হেডফোন থেকে শব্দ কানের চ্যানেলের মাধ্যমে নয়, হাড়ের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়। তাই তাদের শুনতে অসুবিধা হয় না।

৪. ব্যবহার করতে খুব আরামদায়ক।

প্রচলিত হেডফোনগুলো কানে বেশি সময় পড়ে থাকলে কান গরম হয়ে যায়। তাছাড়া আনুসঙ্গিক সমস্যা দেখা দেয়।

কিন্তু বোন কন্ডাকশন হেডফোন মাথায় বাধার বেন্ডের মতো হয়ে থাকে। ফলে এটা দুই কানের উপরের অংশে ক্লিপের মত করে আটকে থাকে। এটা মাথার সাইজ অনুযায়ী ছোট-বড় করা যায়। কান থেকে খুলে পড়ে যাওয়ার চিন্তা নেই। এটা খুব ভালো একটি সুবিধা।

৫. ঘাম ও তাপের সমস্যা নেই।

দীর্ঘক্ষন হেডফোন ব্যবহারের ফলে কান গরম হয়ে যায় এবং ভেতরে ঘামও হয়ে থাকে। যা অস্বাস্থ্যকর। যারা ব্যায়াম করার সময় হেডফোন ব্যবহার করেন তাদের জন্য এটা মারাত্মক একটি সমস্যা।

এটি শুধু বিরক্তিকরই নয় বরং কখনো কখনো মাথাব্যাথাও তৈরি করে। বোন কন্ডাকশন হেডফোন কানের ভেতরে লাগাতে হয় না। তাই কানে বাতাস চলাচল করতে পারে। ফলে এই সমস্যা তৈরি হয় না।

৬. হারিয়ে ফেলা খুব কঠিন!

ব্লুটুথ এয়ারফোন বা এয়ারবাড ব্যবহার করলে চলাচলের সময় এগুলো হারিয়ে যেতে পারে।  

বোন কন্ডাকশন হেডফোনের সাইজ একটু বড়। তাছড়া স্ট্রাইপ দেয়া থাকে। তাই চাইলেও হারিয়ে ফেলা যাবে না!

৭. ওয়াটারপ্রুফ মডেল রয়েছে।

সাধারন হেডফোন বা এয়ারফোনগুলো পানিতে ভিজলে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু বোন কন্ডাকশন হেডফোনের কিছু মডেল রয়েছে যেগুলোতে পানি প্রবেশ করতে পারে না।

শুধু কেনার আগে ওয়াটারপ্রুফ মডেল কিনা তা দেখে নিতে হবে। তাহলে পানি নিয়ে চিন্তার কোনো কারন থাকবে না।


বোন কন্ডাকশন হেডফোন বিএল০৯ এর অসুবিধা:

এবার চলুন কিছু অসুবিধা দেখে নিই।

১. লো সাউন্ড কোয়ালিটি।

বোন কন্ডাকশন হেডফোনের একটি আলোচিত ইস্যু হল এর সাউন্ড কোয়ালিটি কম পাওয়া যায়। এর কারন হলো এটি শব্দ প্রবাহিত করে হাড়ের কম্পনের সাহায্যে। কিন্তু প্রচলিত হেডফোনগুলো শব্দ প্রবাহিত করে বাতাসের সাহায্যে।

এর ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বোন কন্ডাকশন হেডফোনের সাউন্ড কোয়ালিটি প্রচলিতগুলোর তুলনায় কম পাওয়া যায়। পডকাস্ট বা অডিওবুক শোনার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। শুধুমাত্র যেক্ষেত্রে হাই-কোয়ালিটি সাউন্ড প্রয়োজন হয় সেসব ক্ষেত্রে প্রচলিত হেডফোনগুলো ব্যবহার করতে হবে।

২. ব্যায়বহুল।

কিনতে চাইলেও দাম হাতের নাগালে নেই। এর কারন হলো এটাতে ভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।

তাছাড়া এটি মার্কেটে নতুন। তাই দামটা একটু বেশিই।

৩. ব্যাটারি ব্যাকআপ কম।

নয়েজ ক্যানসেলেশান ব্যবস্থা থাকায় এর ব্যাটারি বেশি বার্ণ হয়। তাই ব্যাকআপ সময়টা কম হয়ে থাকে।


বোন কন্ডাকশন হেডফোন বিএল০৯ স্পেসিফিকেশন:

কালার

লাল, নীল, কালো, সবুজ

সাইজ

১৫ সে.মি. x ১২ সে.মি. x ৫ সে.মি. /৫.৯১" x ৪.৭২" x ১.৯৭" (প্রায়)

ব্লুটুথ কাভারেজ এরিয়া

প্রায় ১০ মিটার

ব্লুটুথ ভার্শন

V5.0.

চ্যানেল

স্টেরিও

প্যাকেজিং

প্যাকেটে হেডফোনের সাথে একটি চার্জিং ক্যাবল ও ইন্ট্রোডাকশন দেওয়া থাকবে


বোন কন্ডাকশন হেডফোন বিএল০৯ নিয়ে শেষকথা:

অত্যাধুনিক প্রযুক্তির দিয়ে তৈরি বোন কন্ডাকশন হেডফোন বিএল০৯ খুবই স্বাস্থ্যকর ও ইউজার ফ্রেন্ডলি। শুধু স্বাস্থ সচেতন ব্যক্তিই নয় বধির ব্যক্তিরাও এই হেডফোনের সাহায্যে শুনতে পারবেন।

তাই যারা নিজেদের কানকে নিরাপদ রাখতে চান তাদের পছন্দের তালিকায় অবশ্যই জায়গা করে নেবে এই হেডফোনটি। বোন কন্ডাকশন হেডফোন বিএল০৯ নিয়ে কোনো আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।