অপেক্ষার পালা শুরু রাত ৯টা থেকে। ৯টার পর যেকোনো সময় শুরু হতে পারে ক্লাস।

হ্যাঁ, প্রলয় ভাইয়ের কনটেন্ট রাইটিং কোর্সের প্রথম ক্লাসের কথা বলছি।

অ্যারোমেটিক হালাল সাবানের কেসস্টাডি পড়ার মাধ্যমে উনার লেখার সাথে পরিচয়। তারপর থেকে উনার লেখার নিয়মিত পাঠক।

ভর্তি হতে চেয়েছিলাম ভাইয়ের প্রথম ব্যাচেই। সময়ের অভাবে তখন ভর্তি হতে না পারলেও মিস করিনি এই ব্যাচে ভর্তি সুযোগ।

ভর্তি হওয়ার পর প্রথম ক্লাস আজ। প্রথম ক্লাসে কি বিষয়ে আলোচনা হবে, আমি আদৌ বুঝতে পারবো কি না এসব নিয়ে চিন্তা হচ্ছিল।

অবশেষে ক্লাসের জয়েন লিংক পেলাম ৯টা ৩০ মিনিটে। জয়েন করে দেখি সহপাঠীরা আগেই জয়েন হয়ে গিয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যে প্রলয় ভাই ক্লাস শুরু করলেন।

কনটেন্ট-রাইটিং-কোর্স


কনটেন্ট কি এটা জেনেই চলুন ক্লাসটি শুরু করা যাক।

কনটেন্ট কি?

কোনো একটি বিষয়ে তথ্যসমূহ তুলে ধরার মাধ্যমই হলো কনটেন্ট।এটি লেখা, ছবি, ভিডিও, অডিও যেকোনো ধরনের হতে পারে।

কনটেন্টের প্রকারভেদ:

আগে জানতামই না যে, কনটেন্ট রাইটিংয়ের মধ্যে এতগুলো ডাল-পালা (প্রকারভেদ) আছে! আচ্ছা আপনারা কি আগে জানতেন যে কনটেন্ট রাইটিং প্রায় ১০ ধরনের হয়?

আমি কিন্তু এখানেই প্রথম জানলাম। প্রথম স্লাইডেই।

তাহলে চলুন একঝলকে সবগুলো প্রকারভেদ সম্পর্কে ধারনা নিয়ে নেই:

১. এসইও কনটেন্ট রাইটিং:

এক কথায় গুগলের ১ম পেজে কনটেন্ট কে নিয়ে আসাই হলো এসইও।

২. ক্রিয়েটিভ কনটেন্ট রাইটিং:

স্টোরিটেলিং এর মাধ্যমে নিজের ক্রিয়েটিভ কোনো চিন্তা বা কোনো বিষয়কে তুলে ধরা হলো ক্রিয়েটিভ কনটেন্ট রাইটিং।

৩. লং ফর্ম কনটেন্ট রাইটিং:

এটাকে সাধারনত ব্লগ নামেই আমরা চিনি। কোনো কনটেন্ট ৫০০ ওয়ার্ডের বেশী হলে তা লং ফর্ম কনটেন্ট রাইটিং এর কাতারে পড়বে। সহজ কথায় এই ধরনের কনটেন্টে কোনো টপিকে বিশদ আলোচনা করা হয়।

৪. টেকনিক্যাল কন্টেন্ট রাইটিং:

কোন প্রযুক্তি অর্থাৎ, সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যারের কার্যপ্রণালী বর্ণনা করার জন্য যে কনটেন্ট লেখা হয় তা টেকনিক্যাল কন্টেন্ট রাইটিং। কন্টেন্ট রাইটিংয়ের সবচেয়ে কঠিন শাখা এটি।

৫. ঘোস্টরাইটিং:

নাম দেখেই বুঝা যাচ্ছে এখানে ভূতের উপদ্রব আছে। ভূতটি আর কেউ নয় আপনিই!

কি ভয় পেলেন নাকি?

ভয় পাওয়ার কিছু নেই আপনি অদৃশ্য হয়ে যাবেন না। কিন্তু অদৃশ্য থাকতে হবে লেখকের পরিচয়ের সময়। কনটেন্ট লিখবেন আপনি কিন্তু লেখকের নাম থাকবে অন্য কারো নামে। চিন্তা করবেন না আপনার পারিশ্রমিক ঠিকই পেয়ে যাবেন।

তাই কনটেন্ট রাইটিং এর মধ্যে এই শাখাটি খুবই ইন্টারেস্টিং। তাই না?

৬. ওয়েব / এড কপিরাইটিং:

প্রতিদিন আমরা ভিজিট করি বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট। একেকটা একেক ডিজাইনের। কিন্তু এগুলো ব্যবহার করতে গিয়ে কি আমরা আটকে যাই?

সচরাচর এরকম হয় না। ঠান্ডা মাথায় ভাবলে দেখা যাবে প্রতি ওয়েবসাইটেই কনটেন্টগুলো এমন ভাবে সাজানো থাকে এবং ইন্সট্রাকশন দেওয়া থাকে যে আমরা সাইটের প্রবেশের পরই বুঝে যাই এখন কি করতে হবে। তাই না?

এই কাজটি কে করে রেখেছেন আমাদের জন্য? এটা কি ভেবেছেন কখনো?

হ্যাঁ, কাজটি করেন একজন ওয়েব কপিরাইটার। এবং এই কাজটিই হলো ওয়েব কপিরাইটিং।

আর বিজ্ঞাপনগুলোর জন্য মাত্র কয়েক লাইনে অডিয়েন্সকে কাস্টমারে কনভার্ট করার কঠিনতম কাজটি যে করেন তিনি হলেন এড কপিরাইটার। এবং উনার কাজটিকে এড কপিরাইটিং বলে।

৭. ই-মেইল কপিরাইটিং:

ইন্টারনেটের দুনিয়ায় ই-মেইল ছাড়া সবকিছুই অচল। প্রফেশনাল যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যমও হলো ই-মেইল।

কিন্তু আপনি জানেন কি ই-মেইল হলো মার্কেটিংয়ের অন্যতম একটি মেথড?

এটা ই-মেইল মার্কেটিং নামে পরিচিত। আর যারা এই ই-মেইলে থাকা কনটেন্টগুলো লিখাকেই ই-মেইল কপিরাইটিং বলে।

৮. স্ক্রিপ্ট রাইটিং:

অনলাইনে ভালো মানের ভিডিও তৈরির জন্য বা কর্পোরেট বিজ্ঞাপন বা নাটক-সিনেমা সবগুলোতেই প্রয়োজন হয় ভালো মানের স্ক্রিপ্ট। এই স্ক্রিপ্ট তৈরির কাজই হলো স্ক্রিপ্ট রাইটিং।

৯. সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট রাইটিং:

ডিজিটাল বিশ্বে এসে প্রতিটি ব্যাক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় আসতে হচ্ছে। তাদের উপস্থিতি জানান দেয়ার জন্য প্রয়োজন হচ্ছে নিত্য-নতুন কনটেন্টের। যা দিয়ে অডিয়েন্সকে এনগেজ করা যাবে।

এর জন্য যে কনটেন্ট লেখা হয় তাই হলো সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট রাইটিং।

১০. প্রোডাক্ট রিভিউ রাইটিং:

করোনা প্যান্ডেমিকের জন্য ই-কমার্সে কেনাকাটা বিশাল পরিসর লাভ করেছে মাত্র ২ বছরেই। সেই সাথে বেড়েছে প্রতারণা ও আনুসঙ্গিক সমস্যা সমূহ।

তাই যেকোনো কিছু কেনার আগে রিভিউ দেখে আমার নিশ্চিত হয়ে নিই যে সেটা অথেনটিক কি না। সেই জিনিসটি আমার জন্য উপযোগী কি না। এর ভালো-মন্দ দিক কি কি? ইত্যাদি।

এজন্য প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে প্রফেশনাল প্রোডাক্ট রিভিউ লেখার। নিয়ম মেনে এই কাজ করাই হলো প্রোডাক্ট রিভিউ রাইটিং।

ওয়ার্ক প্রসেস অব কনটেন্ট রাইটার:

এতক্ষণ আমরা জানতে পারলাম কনটেন্ট রাইটিং কি এবং এর ডাল-পালাগুলো। কিন্তু যেন তেন ভাবে লিখলেই কি হবে?

অবশ্যই না। নিয়ম মেনে লিখতে হবে।

লেখার কাজটিরও রয়েছে নির্দিষ্ট প্রসেস। যেটা প্রতিষ্ঠিত কনটেন্ট রাইটাররাও ফলো করেছেন ও করছেন।

সেগুলো কি জানতে ইচ্ছে করছে না? চলুন বলছি।

১. রিসার্চিং

কেউ জন্ম থেকেই কোনো কিছু শিখে আসে না। প্রয়োজন অনুসারেই সবকিছু শিখতে হয়। টপিক অনুযায়ী কনটেন্ট লেখার সময় সেটা সম্পর্কে ডিটেইলস জেনে নিতে হবে। জোগাড় করতে হবে অথেনটিক সোর্স। একাজগুলো করাকেই রিসার্চিং বলা হয়ে থাকে।

২. ব্রেইনস্টর্মিং

রিসার্চ করে সব তথ্য জড়ো করা শেষ। এবার লিখতে হবে। কিন্তু তার আগে একটি ধাপ এখনো বাকী আছে। সেটা ব্রেইনস্টর্মিং।

শব্দ দেখেই নিশ্চয় বুঝতে পারছেন ব্রেইনের মধ্যে একটা ঝড় চালাতে হবে। ঝড়ের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় তথ্যগুলো উড়িয়ে দিয়ে খাঁটিটুকু বের করতে হবে।

তারপর অডিয়েন্স সম্পর্কে জেনে তাদের বুঝতে যেন সুবিধা হয় সেই নিয়ম / প্রসেস খুঁজে বের করতে হবে। এটাই ব্রেইনস্টর্মিং।

৩. রাইটিং

এবার কাঙ্ক্ষিত কনটেন্টটি লেখার পালা। পাঠকের জন্য সহজ করে লিখতে হবে। সাথে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ সোর্স থেকে তথ্য যোগ করে লেখাটিকে অথেনটিক করে তুলতে হবে।

৪. প্রুফ রিডিং

কনটেন্ট লেখা শেষ? এবার তাহলে পাবলিশ করতে হবে। তাই না?

হ্যাঁ, পাবলিশতো করতেই হবে কিন্তু আর একটা দরকারী কাজ এখনো বাকী আছে। প্রুফ রিডিং করতে হবে সম্পূর্ণ কনটেন্টের।

মনযোগ দিয়ে লিখলেও লেখার মাঝে বানান ভুল বা অন্যান্য সমস্যা থাকতেই পারে। এগুলো ধরা পড়বে প্রুফ রিডিংয়ের সময়। তখন অনেকগুলো বাক্যকে অন্যরকম ভাবেও লিখা যেতে পারে কনটেন্টের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য।

৫. পাবলিশ

চূড়ান্ত মুহুর্ত উপস্থিত। টুক করে একটা ক্লিক করলেই সবাই দেখতে পারবে আপনার পরিশ্রমের ফসল এই কনটেন্টটি।

শেষ বারের মতো একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নিন সব ঠিক ঠাক আছে কি না। সঠিক ফরম্যাটে গোছানো হয়েছে কি না। 

সব যদি ঠিক থাকে তাহলে আর দেরী কীসের?

“পাবলিশ” বাটনে ক্লিক করে দিন না। 

ক্লাস সম্পর্কে কিছু কথা:

প্রতিটি ক্লাসের দৈর্ঘ্য অনেক বেশী। তবুও ক্লাস থাকে প্রানবন্ত। বিরক্তি আসে না মোটেও।

ক্লাসের মধ্যে অনেক রিয়েল লাইফ ঘটনা ভাই শেয়ার করেন যা ক্লাসের পড়াটাকে বাস্তবতায় ফেলে বুঝতে সাহায্য করে। 

কেউ কোনো প্রশ্ন করলে তার প্রশ্ন স্কিপ করা হয় না, উত্তর পাওয়া যায় ব্যাখ্যা সহ। এমনকি রিয়েল লাইভের উদাহরনও দেওয়া হয় প্রাসঙ্গিক হলে।

ক্লাস নিয়ে কিছু অভিযোগ / মতামত:

সহপাঠীরা কিছু সমস্যার কথা বলেছেন। বিশেষ করে লং টাইমের কথা।

আমার কাছে লং টাইম সমস্যা না। কারো কারো সমস্যা থাকতে পারে। আর স্লাইডের সাথে প্রাসঙ্গিক রিয়েল লাইফ ঘটনাগুলো শেয়ার করাতে কারো কোনো সমস্যা নেই আশাকরি। বরং এটি আমাদের জন্য আরো উপকারী হতে পারে।

কেউ যদি ভাইয়ের সাথে স্লাইডের টপিক ছাড়া অন্য টপিকে কথা বলতে চান তবে সেটা ক্লাসের পরে কথা বলতে পারেন। ভাই তখন আনলিমিটেড টাইম দিয়ে থাকেন। এতে সকলের অভিযোগের সুরাহা হতে পারে বলে মনে হয়।

এছাড়া আমার আলাদা ভাবে তেমন সমস্যা নেই। যদি কোনো সমস্যার মুখোমুখি হই তবে সেটা জানাব।

শেষ কথা:

যদি একটি সারংশে যাই, তাহলে বলতে হয় আমি বেশ কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ার উপলব্ধি করছি ক্লাস করার পর।

১. পড়ার কোনো বিকল্প নেই। যত বেশী পড়ব তত লিখতে পারব।

২. শুধু পড়লেই হবে না। লিখতে হবে। ভালো হোক বা মন্দ হাত চালু রাখতে হবে।

৩. বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে মিশতে হবে। বলা হয়ে থাকে গল্প রাস্তায় চুইংগামের মতো পড়ে থাকে। হেটে যাওয়ার সময় জুতার সাথে লেগে যায়।  উপযুক্ত লোক সেটা ধরতে পারে। বাকীরা ইগনোর করে।

৪. সবসময় আল্লাহ তায়ালার কাছে চাইতে হবে। নামায পড়তে হবে। তিনিই সবকিছুর মালিক।

৫. সময় পেলেই ভ্রমন করতে হবে। ভ্রমন দৃষ্টিকে প্রসারিত করে।


আরেকটি বোনাস বিষয় বলে শেষ করি। আপনি কি জানেন যে, জেনে হোক বা অজান্তে আপনি একটি লং ফর্ম কনটেন্ট পড়ে শেষ করে ফেলেছেন?

এই লেখা নিয়ে আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। নিশ্চয় আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে লেখার উন্নতি করতে সাহায্য করবেন।